‘জাওয়াদ’ নিয়ে বাংলায় চুড়ান্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছে। চলছে মাইকিং। শহরবাসীকে সতর্ক করেছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, এদিন কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছুঁতে পারে ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁতে পারে। এদিন মূলত আংশিক মেঘাচ্ছন্ন থাকবে কলকাতার আকাশ।
বৃহস্পতিবার শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের তুলনায় দু’ ডিগ্রি বেশি। এদিকে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৮.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এক্ষেত্রেও স্বাভাবিকের তুলনায় দু’ ডিগ্রি বেশী ছিল। বৃষ্টি হয়নি। অর্থাৎ ‘জাওয়াদ’ আসার আগেই পূর্বাভাস অনুযায়ী কলকাতায় বাড়ল দিন ও রাতের তাপমাত্রা।
ধেয়ে আসছে ‘জাওয়াদ’। সম্ভাব্য অভিমুখ ছিল অন্ধ্রপ্রদেশের উত্তর এবং ওডিশার দক্ষিণ উপকূল। কিন্তু ওডিশা উপকূল থেকে উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে মুখ ঘুরিয়ে বাংলার উপকূলবর্তী অঞ্চলের দিকে আসার তোড়জোড় পাকা করছে সে। বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যেই শক্তি বাড়িয়ে সুষ্পষ্ট নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে ‘সে’।
আজ, শুক্রবার রাতের মধ্যেই আরও শক্তি বাড়িয়ে সুস্পষ্ট নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদে পরিণত হবে বলে জানাচ্ছেন আবহবিদরা। আগামী শনিবার উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশ এবং ওড়িশা উপকূলের মাঝামাঝি কোনও জায়গায় আছড়ে পড়তে পারে এই ঘূর্ণিঝড়।
তার জেরে বাংলার সমুদ্র ও গাঙ্গেয় উপকূলবর্তী ১২ জেলায় ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা। যার জেরে রাজ্যের কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা। এদিন দুপুরে মুম্বই থেকে ফিরেই আসন্ন দুর্যোগের মোকাবিলা নিয়ে নবান্নে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী ১২ জেলার জেলাশাসকদের নিয়ে আলোচনা সারেন ভার্চুয়ালি।
পাশাপাশি, মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় উপমহাধ্যক্ষ্যের সঙ্গেও ঝড়ের সম্ভাব্য প্রকৃতি ও গতিপথ নিয়ে আলোচনা করেছেন মুখ্যসচিব। ইতিমধ্যেই সমুদ্র উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। যাঁরা ইতিমধ্যেই মাছ ধরতে গিয়েছেন, তাঁদের বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যেই ফিরে আসতে বলা হয়েছে।
মাইকে প্রচার করে পর্যটকদেরও ফিরে যেতে বলতে নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন। শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত দিঘার সমুদ্রে স্নানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে প্রশাসন। তৈরি রাখা হচ্ছে এনডিআরএফ-এর আটটি দলকে।
উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালি, দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ এবং পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘা ও কাঁথির কাছে ইতিমধ্যেই মোতায়েন করা হয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে। মালদহ ও মুর্শিদাবাদেও থাকবে তারা। নবান্ন জানিয়েছে, আরও আটটি দল আসছে এনডিআরএফ’এর।
পাশাপাশি, রাজ্যের সবচেয়ে বড় চিন্তা এখন ফসল নিয়েই। রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘এখন মাঠ থেকে ধান তোলা সম্ভব হলেও, শীতকালীন সব্জির চাষ সঙ্কটের মুখে।’ অকাল দুর্যোগে কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তিনিও। ফলে, রাজ্যের শস্যগোলা বর্ধমান-সহ নানা জেলায় এখন প্রশ্ন একটাই- চাষিদের ফসলে কি কফিনের শেষ পেরেকটাও পুঁতে দেবে জাওয়াদ?
এমনিতেই এবার অকাল বর্ষণে আমন ধানের চাষ প্রবল মার খেয়েছে। নানা জেলায় শোষক পোকার আক্রমণেও বিঘের পর বিঘের ধান নষ্ট হচ্ছে। সবে রোদে জমি শুকোতে শুরু করায় চাষিরা ভেবেছিলেন, দু’-এক দিনের মধ্যেই ধান কাটা শুরু করবেন। এখন ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাসে ফের মাথায় হাত তাঁদের।
এখন বৃষ্টি হলে কাটা ধানও নষ্ট হবে বলে জানাচ্ছেন চাষিরা। তবে কৃষি দপ্তর বুধবার রাত থেকেই নানা জায়গায় মেশিনে ধান কেটে নিরাপদ জায়গায় তুলে রাখার ব্যবস্থা করেছে। বৃহস্পতিবারও অনেক রাত পর্যন্ত বহু এলাকায় কৃষকদের নিয়ে কৃষি দপ্তর থেকে এই কাজ চালানো হয়।
এদিকে উপকূলের দুই জেলা অর্থাৎ পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বিকেলের পর সমুদ্র তোলপাড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেই জানিয়েছে মৌসম বিভাগ। বাংলার উপকূলে ঘণ্টায় ৩০-৪০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইবে।
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, শনিবার উপকূলবর্তী জেলায় বৃষ্টি বাড়বে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ, নামখানা, ঝড়খালি, বাসন্তী, ক্যানিং, গোসাবা, গদখালি, বকখালি সহ একাধিক এলাকায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা।
বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘা, শংকরপুর, তালসারি, তাজপুর, মন্দারমণি সহ একাধিক এলাকায়। সঙ্গে ৪০-৫০ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়া বইবে। এক্ষেত্রেও সমুদ্র উত্তাল থাকার সম্ভাবনা। ১০ থেকে ১২ ফুট উঁচু ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে সমুদ্রতটে।
রবিবার দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে ব্যাপক দুর্যোগের সম্ভাবনা রয়েছে। দুই ২৪ প…