তাহলে কি সিবিআইয়ের উপর ভরসা করতে পারছে না মৃতের পরিবাররা? উঠছে প্রশ্ন। কলকাতা হাইকোর্টের হলফনামা তলবের মাস দেড়েকের মধ্যেই শীতলকুচি-কাণ্ডে রিপোর্ট পেশ করেছে সিআইডি। কিন্তু গুলিকাণ্ডে সিবিআই তদন্তের দাবি করে আদালতে মামলা দায়ের করেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী। সেই গুলিকাণ্ডে সিবিআই তদন্তের কোনও প্রয়োজন নেই বলেই এ বার দাবি করলেন নিহতদের পরিবার। মঙ্গলবার শীতলকুচির গুলিকাণ্ডে তাঁরা একরকম স্পষ্টই জানিয়ে দেন সিবিআই তদন্তে তাঁদের আস্থা নেই। সিআইডির তদন্তেই সন্তুষ্ট তাঁরা। শুধু তাই নয়, ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে নিহত ওই চারজনের পরিবারের একজন সদস্যকে চাকরি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, সিআইডিও সদ্যই তদন্ত শেষ করেছে। তাই নতুুন করে আর সিবিআই তদন্ত চাইছেন না মৃতের পরিজনরা। একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে তাঁরা ক্ষতিপূরণের দাবিও করেছেন। এই মর্মে তাঁরা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থও হতে চলেছেন।
এপ্রসঙ্গে পদ্ম শিবিরের অভিযোগ, চাপ দিয়ে জোর করে তৃণমূলের লোকেরাই এই মন্তব্য করিয়েছে। কিন্তু, এই ঘটনায় সিবিআই তদন্ত হওয়া উচিত। বিজেপি জেলা সভাপতি বাপি গোস্বামী বলেন, “সিবিআই যদি তদন্ত করে তাহলে তো তৃণমূলের লোকেরাই যে ভোট করিয়ে অশান্তির বাতাবরণ তৈরি করেছিল তা প্রমাণ হয়ে যাবে। তাই চাপ দিয়ে আসলে মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু এই ঘটনায় সিবিআই তদন্ত হওয়া উচিত।” তৃণমূল জেলা সভাপতি মহুয়া গোপ বলেন, “শীতলকুচি পরিবারের পাশে প্রথম থেকেই ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ তাঁরা খুশি কারণ বিপদে ছুটে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীই। তাই তাঁরা আজ সিআইডি তদন্তে খুশি থাকবেন এমনটাই স্বাভাবিক। সাধারণ মানুষ তো এটাই চায়।” চলতি মাসেই শীতলকুচি-গুলিকাণ্ডে রিপোর্ট পেশ করেছে সিআইডি। প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চে রিপোর্ট জমা দেয় রাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থা। আদালত সূত্রে খবর, নতুন বছরে অর্থাত্, ২০২২-এ ১২ই জানুয়ারি, শীতলকুচি মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। গত ১২ই এপ্রিল প্রথম শীতলকুচি-কাণ্ডে মামলা দায়ের করা হয়। মামলা করেন আইনজীবী আমিনুদ্দিন খান। সূত্রের খবর, সিআইডির পেশ করা রিপোর্টে লেখা হয়েছে, শীতলকুচি-কাণ্ডের তদন্ত শেষ করেছে সিআইডি। গুলিকাণ্ডের তদন্ত করতে সিআইএসএফ জওয়ানদের সামনাসামনি জেরা করার আবেদনও জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এর আগে সিআইএসএফ জওয়ানদের সামনাসামনি জেরা করার আবেদন করেছিল সিআইডি। যদিও, সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বাহিনীর তরফে বলা হয়, অনলাইনে ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে প্রশ্নোত্তর পর্ব চলতে পারে। সিআইএসএফের সেই আবেদন কার্যত খারিজ করেছে সিআইডি। চলতি মাসে আদালতে পেশ করা রিপোর্টে, সিআইএসএফ জওয়ানদের সামনাসামনি জেরা করতে চেয়ে আবেদন জানিয়েছে সিআইডি। শীতলকুচি বুথে গুলিকাণ্ডে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছ থেকে হলফনামা আগেই তলব করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। কোচবিহারের শীতলকুচিতে বিধানসভা ভোটগ্রহণের দিন অশান্তিতে মৃত্যু হয় ৪ জনের। এই প্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের হয় জোড়া জনস্বার্থ মামলা। এই মামলার শুনানিতে কেন্দ্র ও রাজ্য, উভয়ের কাছেই হলফনামা চায় আদালত।
এরপর জোড়া জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে আদালত জানায়, শীতলকুচির গুলিকাণ্ডে সিআইডি তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে রিপোর্ট আকারে হলফনামা দিতে হবে রাজ্যকে। অন্যদিকে সিআইএসএফ গুলি কীভাবে, কোন পরিস্থিতিতে চালিয়েছিল, তার কার্যকারণ ইত্যাদি বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে এই মর্মে কেন্দ্রের কাছ থেকেও একটি হলফনামা নেবে আদালত। কেন্দ্র ও রাজ্যের কাছে এই পিটিশন তলব করে নির্দেশ দেন কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দলের ডিভিশন বেঞ্চ। নভেম্বর মাসেই এই মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল। উল্লেখ্য, চতুর্থ দফার ভোটে শীতলকুচির বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে ৪ জন তৃণমূল কর্মীর মৃত্যু হয়। ভোটের দিন আনন্দ বর্মণ নামে একজন ভোটের লাইনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ওই মামলায় ইতিমধ্য়েই তল্লাশি চালিয়েছে সিবিআই-এর তদন্তকারী দল। ৪ তৃণমূল নেতা ও কর্মীদের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তল্লাশির খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। তবে কাউকেই এ দিন গ্রেফতার করতে পারেনি তদন্তকারী দলের অফিসাররা। এদিকে বিধানসভা নির্বাচনের দিন জোড়পাটকির বুথে সিআইএসএফ গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে। যা নিয়ে জোর শোরগোল শুরু হয় রাজ্য রাজনীতিতে। এর পর স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগের ভিত্তিতে একটি এফআইআর রুজু হয়। তারপর আরও একটি এফআইআর করে সিআইএসএফ।