একদিন, দুইদিন নয়। পুরো ১০ মাস। পুরো ১০ মাস ধরে শ্বাসকষ্ট, কাশি আর বুকে ব্যথায় ভুগছিল বছর বারোর রাইহান লস্কর। তার ডান ফুসফুসে আটকে রয়েছে একটি ছোট প্লাস্টিকের বাঁশি। সেই থেকেই এই বিপত্তি। এইভাবেই কাটছিল দিন। অবশেষে স্বস্তি দিল এসএসকেএম। বিরল অস্ত্রোপচারে বিরাট সাফল্যও পেল এসএসকেএম।
এসএসকেএম হাসপাতাল সূূত্রে জানা গিয়েছে, রাইহান লস্কর নামের ওই কিশোর বারুইপুরের বাসিন্দা। চিপস খেতে গিয়ে প্যাকেটে যে গিফট পাওয়া যায়, সেই গিফটে ছিল বাঁশি। সেই বাঁশিটি অসাবধনতাবশত গিলে ফেলে রাইহান। তার দিন-দুই পর থেকেই এই বিপত্তি।
লকডাউন পরিস্থিতি কিছুটা মিটলে ফের এসএসকেএমে ছেলেকে নিয়ে আসেন আজিজুল। এসএসকেএমের অটো রাইনো ল্যারিঙ্গোলজি বিভাগে চলে তার অস্ত্রোপচার। ব্রঙ্কোপসি অপারেশনের মাধ্যমে কোনও কাটাছেঁড়া না করেই এন্ডোস্কপি যন্ত্রের মাধ্যমে বাঁশিটি বের করে আনা হয়।
চিকিৎসক অরিন্দম দাস জানিয়েছেন, ওই বাঁশিটি একটি ‘ফরেন এলিমেন্ট’ হিসেবে ফুসফুসে গিয়ে প্রবেশ করে। তার জেরেই এই বিপত্তি। শ্বাস নিতে পারছিল না কিশোর। এমনকী, ফুসফুসের কার্যক্ষমতা ক্রমেই কমছিল। এভাবে চলতে থাকলে আরও বড় বিপদ হতে পারত।
শুধু তাই নয়, চিকিত্সকদের আরও দাবি, এইভাবে এতদিন ধরে বাঁশি আটকে থাকায় আরও বড় বিপদ হতে পারত। সেই বিপদ থেকে কোনওক্রমেই রক্ষা পেল শিশু। পাশাপাশি, অভিভাবকদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশও দিয়েছেন চিকিত্সকরা।
রাইহানের বাবা আজিজুল জানিয়েছেন, কয়েকদিন পর থেকেই ওই কিশোর বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়। সঙ্গে সঙ্গে দমকে শুকনো কাশি। যে ছেলে পুকুরে নেমে স্নান করত, সে ছেলেই যেন বদলে গেল! বুকে ব্যথায় জলে নামতে চায় না। জলে নামলে তার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে।
এরপর আর দেরি করেননি আজিজুল। সোজা ছেলেকে নিয়ে চলে আসেন কলকাতায়। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে প্রথমে চিকিত্সার জন্য রাইহানকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই পরীক্ষার মাধ্যমে ধরা পড়ে, রাইহানের ডান ফুসফুসে মেইন ব্রঙ্কাসেই আটকে রয়েছে বাঁশিটি। কিন্তু, সেই বাঁশি বের করতে গেলে যেতে হবে এসএসকেএমএ।
এদিকে, লকডাউনের মধ্যে ছেলেকে নিয়ে এসএসকেএম-এ নিয়ে আনা কার্যত অসম্ভব ছিল আজিজুলের পক্ষে। অগত্যা, বারুইপুরের গ্রামেই ফিরে যায় লস্কর পরিবার। আর ১০ মাস ধরে ওভাবেই বুকে বাঁশি নিয়েই দিন কাটায় রাইহান।