এবার আমজনতার অসন্তোষের মুখে পড়ল কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রক। করোনা সংক্রমণ ছড়ানোর অজুহাতে রেলের এসি কামরায় ‘বেড রোল’ দেওয়া বন্ধ করা হয়। ওই কামরায় ব্যবহারের জন্য বিনামূল্যে প্রত্যেক যাত্রী একটি কম্বল, দুটি বেডশিট ও একটি বালিশ পেতেন। প্রথমে সেটি অস্থায়ীভাবে তুলে দেওয়া হলেও এখন সেই সিদ্ধান্তকেই স্থায়ী করে উল্টে যাত্রীদের বেডশিট, ব্ল্যাঙ্কেট বিক্রি করা শুরু করেছে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকা ভারতীয় রেল। ব্ল্যাঙ্কেট কিনতে খরচ করতে হবে ১৮০ টাকা। এছাড়া ১২০ ও ১৮০ টাকায় দু’রকমের বেডসিট বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে বালিসও কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। একসঙ্গে সব সামগ্রী নিয়ে ৩০০ টাকার কিট হিসেবে বিক্রি শুরু হয়েছে হাওড়া, শিয়ালদহ সহ দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে। তবে, এখানেও মোদী সরকারের ‘ট্রেড মার্ক’ হয়ে ওঠা বিলগ্নিকরণের ছোঁয়া। কারণ এই সামগ্রী সরবরাহের জন্য বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করছে রেল। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ঘুরপথে রেলে যাত্রার খরচ বাড়িয়ে দেওয়া হল। যা অনেকের ক্ষেত্রেই বাড়তি বোঝা হবে। পূর্ব রেলের জনসংযোগ আধিকারিক একলব্য চক্রবর্তী বলেন, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে বেড রোলের কিট কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়াও ব্ল্যাঙ্কেট, বেড সিট আদালাভাবেও কেনা যাবে। বিভিন্ন প্রাইভেট এজেন্সির সঙ্গে এনিয়ে চুক্তি হচ্ছে। তারাও সরবরাহ করতে পারবে। যদিও পুরো বিষয়টি পরীক্ষামূলকভাবেই প্রয়োগ করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, চিকিৎসার জন্য বহু বাঙালিই ভেলোর, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই এসি কোচে যাত্রা করেন, যাতে রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি না হয়। একইভাবে বহু ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর পরিবারও সর্বস্ব বিক্রি করে চিকিৎসার জন্য মুম্বই যাত্রা করেন এসি কোচে। হয়তো এসিতে চাপার সামর্থ্য না থাকলেও পরিস্থিতি তাঁদের বাড়তি খরচে বাধ্য করে। এই অবস্থায় অন্তত রাতে শোয়ার জন্য চাদর, বালিসের জন্য এতদিন বাড়তি খরচ করতে হতো না। সাদা বেডশিট, বালিশ আর কম্বলের প্যাকেট যখন রেলের পক্ষ থেকে যাত্রীদের হাতে তুলে দেওয়া হতো, তা উপহারের চেয়ে কম ছিল না। বেডশিট নোংরা থাকলে যাত্রীদের আবদারে তা পাল্টে দেওয়াও হতো। ব্যবহারের জন্য পেলেও তা কম কী? কিন্তু সেই বেড রোল দেওয়া বন্ধ করে দেয় রেল। বলা হয়, এতে করোনা সংক্রমণের ভয় আছে। তাই এই সিদ্ধান্ত। বাস্তবতা বুঝে সকলেই তা সমর্থন করেছিলেন। কিন্তু বেরিয়ে পড়েছে ঝুলি থেকে বেড়াল। করোনা সংক্রমণ কমলেও আর বেড রোল ফিরছে না রেলে। এবার রীতি মতো গাঁটের কড়ি খরচ করে কিনতে হবে ওইসব সামগ্রী। তাতেই মাথাচাড়া দিয়েছে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ।