একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির স্বপ্ন ছিল গঙ্গাপারের নীলবাড়ির দখল পাবে দল। তার আগে ছোট লালবাড়ি কলকাতা পুরসভা দখলের স্বপ্নও ছিল বিজেপির। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সে স্বপ্ন যে বাস্তবায়িত করা সম্ভব নয় সেটা বুঝে এখন বিজেপির লক্ষ্য, যে কোনও মূল্যে দ্বিতীয় স্থান নিশ্চিত করা। হ্যাঁ, রাজ্যে আসন্ন পুরভোটে দ্বিতীয় স্থান পেলেই অনেক। তার থেকে আর বেশি কিছু চাওয়ার নেই গেরুয়া শিবিরের। কলকাতা এবং হাওড়ার দলীয় নেতাদের সঙ্গে পুরভোটের প্রস্তুতি বৈঠকে এ কথা কোনও রাখঢাক না করেই জানিয়ে দিয়েছেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।
সম্প্রতি একের পর এক নির্বাচনে ধাক্কা খেয়ে রাজ্য বিজেপি নেতাদের কাছে প্রধান বিরোধী দলের খেতাব টিকিয়ে রাখাটাই সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। তাই কলকাতা ও হাওড়ায় পুরবোর্ড দখল করার ‘খোয়াব’ দেখতে রাজি নন তাঁরা। বামেদের পিছনে ফেলে দ্বিতীয় হতে পারলেই আপাতত খুশি হবে পদ্ম-নেতৃত্ব। বিধানসভায় বিজেপি প্রধান বিরোধী দল। সেই মর্যাদা কলকাতা এবং হাওড়া পুরসভার ক্ষেত্রেও জুটবে কি, এই চিন্তাতেই কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে গেরুয়া শিবিরের শীর্ষ নেতাদের। কারণ, বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পরে সংগঠনের যে ছন্নছাড়া দশা তা নিয়েই উদ্বিগ্ন বিজেপি নেতৃত্ব।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে কলকাতা পুর এলাকার ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১১৪টিতে জয় পায় তৃণমূল। বামেরা পেয়েছিল ১৫টি ওয়ার্ড আর বিজেপি ৭টি। কংগ্রেস জয় পায় ৫টি ওয়ার্ডে। বাকি ৩টি ওয়ার্ডে জয়ী হন নির্দল প্রার্থীরা। এর পরে দু’টি নির্বাচন হয়েছে। ২০১৯-এর লোকসভা ও ২০২১-এর বিধানসভা। তারও পরে কলকাতার ভবানীপুর আসনে সেপ্টেম্বরে উপনির্বাচন হয়েছে। আর প্রতিটিতেই মহানগরের ওয়ার্ডভিত্তিক ফল বদলে গিয়েছে।
রাজ্য বিজেপির হিসেব মতো ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে ১৩২টি ওয়ার্ড এলাকায় এগিয়ে ছিল তৃণমূল। পিছিয়ে ছিল ৭০, ৭৪, ৮৭, ২২, ২৩, ২৫, ২৭, ৪২, ২১, ২৪, ৩১ এবং ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডে। বিজেপি এগিয়ে ছিল প্রথম ১১টি ওয়ার্ডে। কংগ্রেস এগিয়ে ছিল শুধুই ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডে। বামেরা কোথাওই এগিয়ে থাকতে পারেনি। ভবানীপুর উপনির্বাচনে দেখা যায় ৭০ ও ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডে ফের এগিয়ে গিয়েছে তৃণমূল। ফলে বিজেপির অঙ্ক বলছে শহরের ৯টি ওয়ার্ড এলাকায় পদ্মে এগিয়ে। যদিও বিধানসভা নির্বাচন আর পুরনির্বাচনের ভোটের হিসেব যে এক হয় না সেটাও মাথায় রাখছে বিজেপি। আর সেই হিসেব ধরেই গত বছরের মতো এ বারেও কমপক্ষে ৭টি ওয়ার্ডে যাতে জয় পাওয়া যায় সেটাই লক্ষ্য বিজেপির।
তবে গত বার ৭টি আসন জিতলেও স বক’টি ধরে রাখতে পারেনি গেরুয়া শিবির। ৭, ২২, ২৩, ৪২, ৭০ ৮৬, এবং ৮৭ ওয়ার্ডে জয় পায় বিজেপি। যার মধ্যে ৭ এবং ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাপি ঘোষ ও অসীম বসু পরে তৃণমূলে যোগ দেন। এ বার ওই ওয়ার্ডগুলি না হলেও মোট কমপক্ষে ৭টি ওয়ার্ড পেতে চাইছে বিজেপি। এক রাজ্য নেতার কথায়, ‘বিধানসভা নির্বাচনের ফলের উপরে কিছুই নির্ভর করে না। তবে এটাও ঠিক যে কলকাতায় আমাদের সাংগঠনিক শক্তি বরাবরই কম। আর এখন তা বেশ ছন্নছাড়া অবস্থায়। তাই বড় লক্ষ্য নেওয়ার কোনও অর্থই হয় না। দ্বিতীয় স্থান নিশ্চিত করাটাই প্রধান লক্ষ্য।’