তখনও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মসনদে বসেননি নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী। লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে বারবার তাঁর মুখে শোনা গিয়েছিল, ‘না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা’ স্লোগানটি। অর্থাৎ জনগণকে দুর্নীতিমুক্ত ভারতের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কতটা বাস্তব ছুঁয়েছে সেই স্বপ্ন? মোদী জমানায় পুরোপুরি ফুটে উঠেছে ভিন্ন চিত্র। ব্যবসা-বাণিজ্যে ঘুষ না দিলে এদেশে যে কোনও কাজই হয় না, আরও একবার তার প্রমাণ মিলল আন্তর্জাতিক সমীক্ষায়। বিশ্বের ১৯৪টি দেশের মধ্যে ব্যবসায়িক ঘুষের ঝুঁকির নিরিখে আরও অবনতি হল ভারতের। ৭৭তম স্থান থেকে চলতি বছরের হিসেবে ৮২-তে নেমে এল ভারত। তবে সান্ত্বনা বলতে, প্রতিবেশী পাকিস্তান, চীন, নেপাল ও বাংলাদেশ আমাদের এ ব্যাপারে টেক্কা দিয়েছে। তাদের অবস্থা ভারতের থেকেও শোচনীয়। যদিও প্রতিবেশীদের মধ্যে ব্যতিক্রম ছোট্ট পাহাড়ি দেশ ভুটান। এই তালিকায় তাদের অবস্থান তুলনামূলকভাবে সন্তোষজনক। ৬২ নম্বর স্থানে রয়েছে তারা।
প্রসঙ্গত, ঘুষ-বিরোধী মানদণ্ড নির্ধারণকারী সংগঠন ‘ট্রেস’ প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উপর এই সমীক্ষা চালায়। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক, ঘুষ রুখতে যে সমস্ত আইন-কানুন রয়েছে, বাস্তবে তার প্রয়োগ কতটা হচ্ছে, সরকার ও আমলাদের কাজে স্বচ্ছতা, ঘুষ ও দুর্নীতি দমনে সমাজের বিশিষ্টদের পাশাপাশি সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকা ও নজরদারি, এসবের উপরেই ভিত্তি করেই তৈরি হয় সূচক। গত বছর ৪৫ পয়েন্ট পেয়ে ভারতের স্থান ছিল ৭৭ নম্বরে। কিন্তু এ বছর আরও খারাপ হয়েছে দেশের অবস্থা। ৪৪ পয়েন্ট পেয়ে আরও পাঁচ ধাপ পিছিয়ে গিয়েছে ভারত।
এই সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, ব্যবসায় ঘুষের ঝুঁকির ‘শিরোপা’ এ বছর পেয়েছে উত্তর কোরিয়া, তুর্কমেনিস্তান, ভেনিজুয়েলা ও ইরিত্রিয়া। অন্যদিকে, কম ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় নাম রয়েছে ডেনমার্ক, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, সুইডেন ও নিউজিল্যান্ডের। মিশর, ভেনিজুয়েলা, তুরস্ক, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরির মতো দেশে গণতন্ত্র বিপন্ন বলে লাগাতার আওয়াজ তুলছে মানবাধিকার সংগঠনগুলি। সেসব দেশের ক্ষেত্রে ঘুষ দেওয়ার ও নেওয়ার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ক্রমেই খারাপ হচ্ছে ওইসব দেশের পরিস্থিতি। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গত পাঁচ বছরের পরিস্থিতি নিয়ে খানিকটা উদ্বিগ্নই বিশেষজ্ঞ মহল। কারণ, এই ক’বছরে আমেরিকায় ব্যবসা ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে ঘুষ দেওয়ার প্রবণতা।