এবছর আবহাওয়া অনুকূল ও উপযুক্ত থাকায় দেশে কমপক্ষে ৯০ লক্ষ গাঁট কাঁচাপাট উৎপন্ন হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাতেই উৎপন্ন হয়েছে ৭৫ লক্ষ গাঁট। সোমবার কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রকের অধীনস্থ জুট কমিশনারের দপ্তরে আয়োজিত বিশেষজ্ঞ কমিটির বৈঠকে এই হিসেব চূড়ান্ত হয়েছে। এবার এই বিপুল পরিমাণ পাট উৎপন্ন হওয়ায় চটশিল্পে কোনও সংকট তৈরি হওয়ার কথা নয় বলে বৈঠকে অংশগ্রহণকারী সকলেই একমত হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও গ্রামাঞ্চলে অবৈধ মজুতদারির কারণে রাজ্যে চটশিল্পকে কাঁচাপাটের তীব্র অভাবে পড়তে হচ্ছে বলে এদিনের এই উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে উদ্বেগ ব্যক্ত করে শিল্পের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্ব। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের বস্ত্রমন্ত্রক তাদের বক্তব্যকে গুরুত্ব না দেওয়ায় পাটের সর্বোচ্চ মূল্য বেঁধে দেওয়ার ব্যাপারে জুট কমিশনারের নিদান প্রত্যাহারের ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপ চেয়েছে চটকল মালিকদের সংগঠন আইজেএমএ। তারা চায়, মমতা কেন্দ্রকে অবিলম্বে চিঠি লিখে এই সিদ্ধান্ত তুলে দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করুন। বাংলাদেশের তুলনায় রাজ্যের পাটচাষীরা উৎপাদিত ফসলের জন্য কম দাম পাচ্ছে, এই যুক্তি তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠিও দিয়েছে সংগঠনটি।
প্রসঙ্গত, চলতি পাট-বর্ষে (জুলাই ২০২১-জুন ২০২২) এবার দেশে মোট কত পাট উৎপন্ন হয়েছে, তা নিয়ে এতদিন নানা ধরনের আনুমানিক হিসেব বাজারে চালু ছিল। কিন্তু বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ দপ্তর ও সংস্থার নিজস্ব হিসেব ঠিক কী, তা জানতে এক্সপার্ট কমিটির বৈঠক ডাকেন জুট কমিশনার মলয়চন্দন চক্রবর্তী। এদিনের বৈঠকে চটশিল্পের সঙ্গে যুক্ত কারবারীদের সংগঠনগুলি তৃণমূল স্তরে খোঁজখবর করে মোট ৮৫ লক্ষ গাঁট পাট উৎপন্ন হয়েছে বলে হিসেব পেশ করে। এব্যাপারে তারা রাজ্যওয়ারি তালিকাও দেয়। অন্যদিকে জুট বোর্ড, জুট কর্পোরেশন সহ কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রকের কর্তাদের মতে এবছর আরও বেশি পাট উৎপন্ন হয়েছে। তাঁদের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী এবছর ৯৫ লক্ষ গাঁট পাট হয়েছে দেশ জুড়ে। শেষ পর্যন্ত এক প্রস্থ চাপান-উতোরের পর ৯০ লক্ষ গাঁট পাট উৎপাদের হিসেবে সিলমোহর দেয় সকলেই। বস্ত্রমন্ত্রক সূত্রের খবর, এবছর বস্তা তৈরির জন্য চটকলগুলির প্রয়োজন হবে ৭০ লক্ষ গাঁট পাট। এছাড়া অন্যান্য শিল্পের জন্য দরকার ধরা হয়েছে আরও ১২ লক্ষ গাঁট। গতবারের পড়ে থাকা (ক্লোজিং ব্যালান্স) কাঁচাপাটের পরিমাণ ধার্য হয়েছে ৫ লক্ষ গাঁট। যদিও এই ক্লোজিং ব্যালান্স নিয়ে বিস্তর বিতর্ক রয়েছে। আমদানি-রপ্তানির হিসেব মাথায় রেখে চলতি পাট-বর্ষের শেষে ক্লোজিং ব্যালান্স ১৮ লক্ষ গাঁট থাকতে পারে বলে এদিন বিশেষজ্ঞ কমিটি হিসেবে করেছে।