উপনির্বাচনে হারের পর থেকেই বঙ্গ বিজেপিতে অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে পড়েছে। প্রসঙ্গত ৩০ অক্টোবরের উপনির্বাচনে চারটি আসনে জয়লাভ করে শাসক তৃণমূল কংগ্রেস। এর মধ্যে তারা বিজেপির কাছ থেতে দুটি আসন ছিনিয়ে নেয়।
তবে এই দ্বন্দ্ব প্রকট হয়েছে, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব সাংগঠনিক নেতৃত্বকে এড়িয়ে দুই বিধায়ককে দুই বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটের দায়িত্ব দেওয়ায়। উপনির্বাচনে হারার পরে বিজেপির অভ্যন্তরে বহিরাগত দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে! প্রকট হচ্ছে পদাধিকারীদের বাক্যবান।
হুগলির বিধায়ককে পাঠানো হয়েছিল গোসাবার
চারটি আসনে উপনির্বাচনের একটি ছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবায়। এলাকাটি এই মুহূর্তে তৃণমূলের গড় বলে পরিচিত।
কিন্তু সেখানে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে পাঠানো হয় আরামবাগের বিধায়ক মধুসূদন বাগকে। বনাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজেপির নেতার কথায় একএক জেলার রাজনীতি একেক রকমের।
যে বিধায়ক কোনও দিন দক্ষিণ ২৪ পরগনার কোনও ভোটের সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন না, তাঁকে কীভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের গড় বলে পরিচিত এলাকায় পাঠানো হয়। ওই নেতা দক্ষিণ ২৪ পরগনায় গিয়ে দলের নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতেই লাগিয়ে ফেলেছেন দুসপ্তাহের বেশি।
তারপরেই নির্বাচন এসে গিয়েছে। কেননা এই নির্বাচনের প্রচারের তেমন কোনও সময় ছিল না। তার মধ্যে ছিল সব থেকে বড় উৎসব দুর্গা পুজো।
একই পরিস্থিতি উত্তর ২৪ পরগনার খড়দহে। উত্তরবঙ্গের বিধায়ককে পাঠানো হয়েছিল এই কেন্দ্রের দায়িত্ব দিয়ে। সেই কেন্দ্রেও বিজেপি প্রার্থী প্রায় ৯০ হাজার ভোটে পরাজিত হয়েছেন। কিন্তু গত বিধানসভা নির্বাচনে এই ব্যবধান ছিল ২৮ হাজারের মতো। আরামবাগের নেতা গোসাবায় গিয়ে ভোটারদের চরিত্তর বুঝতেই ব্যর্থ হয়েছেন।
তা ফুটে উঠেছে ফলাফলে। এমনটাই মত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজেপি নেতার। সেই কারণে ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে ৩১ শতাংশ ভোট পাওয়া বিজেপির ভোট উপনির্বাচনে নেমে ৯.৯৫ শতাংশ হয়ে গিয়েছে। আর তৃণমূলপ্রার্থী ১,৪৩,০৫১ ভোটে বিজেপি প্রার্থীকে পরাজিত করেছেন।
বহিরাগতদের দায়িত্ব দেওয়ায় ক্ষোভ
এবারের উপনির্বাচনে বিজেপি দিনহাটা, খড়দহ ও গোসাবায় নিজেদের জমানত খুইয়েছে। শুধুমাত্র শান্তিপুরে জমানত বাঁচাতে পেরেছে তারা।
তুলনামূলকভাবে শান্তিপুরে হিন্দু উদ্বাস্তুদের সংখ্যা বেশি। সেই কেন্দ্রে বিধানসভা নির্বাচনে জয় এলেও, উপনির্বাচনে হেরেছে বিজেপি। সংগঠনের নেতাদের ভোট পরিচালনার দায়িত্ব না দিয়ে, বাইরের নেতাদের দেওয়ার ক্ষোভ তৈরি হয়েছে অন্দরমহলে।
উপনির্বাচনে হারার পরেই বেসুরো হতে শুরু করেছেন বিজেপির বিভিন্ন পদাধিকারীরা। রাজ্য বিজেপি যুব মোর্চার সভাপতি সৌমিত্র খান বলেছেন, দলের ওপরের তলায় কারও সঙ্গে কারও মিল নেই।
একজন অন্যজনকে না মেনে নিতে পারার কারণে প্রভাব পড়েছে নিচুতলাতেও। বিভেদের রাজনীতির অভিযোগ তুলেছেন দলের সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত অভিনেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে তথাগত রায়ের তোপ দিলীপ ঘোষ ছাড়াও কৈলাশ বিজয়বর্গীয়, শিবপ্রকাশ এবং অরবিন্দ মেননকে লক্ষ্য করে।