সাম্প্রতিক কালে বারবারই কংগ্রেসকে তীব্র আক্রমণ করছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ নিয়ে হাত শিবির পাল্টা আক্রমণের রাস্তায় হাঁটতেই এবার সোনিয়া গান্ধীর কোর্টেই বল ঠেলে দিল বাংলার শাসক দল। তাদের দাবি, মমতা নিজে সোনিয়াকে অনুরোধ করেছিলেন বিরোধী জোটের একটি স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করে অভিন্ন কর্মসূচী তৈরি করতে। বিভিন্ন জনমুখী বিষয় নিয়ে সঠিক সমন্বয়ের মাধ্যমে বিরোধী দলগুলির প্রতিনিধিরা বিভিন্ন রাজ্যে গিয়ে যাতে প্রচারে অংশ নেয়, সেটাই ছিল মমতার উদ্দেশ্য। কিন্তু কংগ্রেস শুধু সময় নষ্ট করেছে, তৃণমূলের পরামর্শমাফিক শক্তপোক্ত জোট গঠনের কোনও চেষ্টা করেনি। তৃণমূল তাই আর অপেক্ষা করতে চায় না।
তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, কংগ্রেস অন্তত একশোটি আসন না পেলে বিজেপিকে যে দিল্লীর কুর্সি থেকে হটানো সম্ভব নয়, সেই পাটিগণিত তাদেরও জানা। কিন্তু ২০১৪ এবং ২০১৯-এর ভোটে রাহুল গান্ধীর ব্যর্থতা তাদের খুব একটা ভরসা দিচ্ছে না। তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত, পঞ্জাবের মতো রাজ্যগুলিতে অন্তত ১৫০টি আসনে বিজেপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস। সেখানে তৃণমূল, ডিএমকে বা এনসিপি প্রার্থী দিচ্ছে না। কিন্তু সেই সব আসনেও ভাল ফল করতে পারছে না কংগ্রেস। পাঞ্জাবে তাদের বেহাল অবস্থা। গোয়াতে এত আসন পেয়েও ধরে রাখতে পারেনি কংগ্রেস।’
তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘বিজেপি-বিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ, জনমুখী, প্রগতিশীল জোট গড়ার প্রশ্নে তৃণমূল অঙ্গীকারবদ্ধ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কখনই কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে জোটের কথা বলেননি। বরং তিনি জোট সংক্রান্ত অতীতের দুর্বলতা আটকানোর প্রস্তাবই কংগ্রেস সভানেত্রীকে দিয়েছিলেন। কিন্তু কখন তাঁরা সাড়া দেবেন, তার জন্য অনির্দিষ্টকাল বসে থাকা যায় না। তাই বিজেপি-বিরোধিতাকে গুরুত্ব দিয়ে যে যে রাজ্যের নেতা কর্মীরা আমাদের ডাকছেন, আমরা সেখানে যাচ্ছি। সময় এলে জোটের ব্যাপারে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
তৃণমূলের রাজ্যসভার মুখ্যসচেতক সুখেন্দুশেখর রায়েরও দাবি, কংগ্রেস অভ্যন্তরীণ সমস্যায় এত জর্জরিত যে বিজেপি-বিরোধিতার প্রশ্নে তাদের উদ্যোগী হতে দেখা যাচ্ছে না। কংগ্রেসের জন্য বেশ কয়েকমাস অপেক্ষা করেও সাড়া না মেলায় সময় নষ্ট করতে রাজি নয় তৃণমূল। দলের বক্তব্য, বিজেপি সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে দেশে একসঙ্গে সুপরিকল্পিত ভাবে আওয়াজ তোলা উচিত ছিল। কিন্তু তা না করে একদিন হঠাৎ কোনও বিষয়ে তৃণমূলের সদস্যকে ডেকে পাঠানোয় কাজের কাজ হয় না। আর মমতার সাফ কথা, ‘বিজেপির বিরুদ্ধে না লড়ে কংগ্রেস বাংলায় বামেদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়বে, আর আশা করবে আমি তাদের ফুলের মালা দেব— এটা তো হতে পারে না।’