মেঘ ভাঙা বৃষ্টির জেরে রীতিমতো বিধ্বস্ত উত্তরাখণ্ড। বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে রাজ্যের বিভিন্ন নদী। ফলে তৈরি হয়েছে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি। গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মত সামিল পাহাড়ি ধসও। বৃষ্টির তেজ কিছুটা কমলেও বন্যা ও ধসে এখনও পর্যন্ত ৫২ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। নৈনিতাল, আলমোড়াস রানিখেত ভেসে গেছে। জাতীয় সড়ক বিচ্ছিন্ন, বিদ্যুৎ নেই বেশিরভাগ জায়গায়। পানীয় জল, খাবারের অভাব। এই পরিস্থিতিতে আটকে পড়েছেন বাংলার পর্যটকরা। হাওড়া, হুগলি, কলকাতার বিভিন্ন এলাকা থেকে বহু পর্যটক ঘুরতে গিয়েছিলেন উত্তরাখণ্ড। সূত্রের খবর, হাওড়া থেকে যাওয়া সাতজনের একটি দলের খোঁজ মিলছে না। তাছাড়া কলকাতা, হাওড়া, হুগলির অনেকেই আটকে পড়েছেন। তাঁদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা শুরু করেছে নবান্ন।
সূত্রের খবর, বাংলা থেকে উত্তরাখণ্ডে গিয়ে আটকে পড়েছেন ৭০ জনের বেশি বাঙালি পর্যটক। তাঁদের উদ্ধারের জন্য চেষ্টা করছে রাজ্য সরকার। নবান্ন সূত্রে জানানো হয়েছে, উত্তরাখণ্ড সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। পর্যটকদের কীভাবে উদ্ধার করে ফিরিয়ে আনা যায় তার চেষ্টা চলছে। হাওড়ার অনেক পর্যটকই আটকে উত্তরাখণ্ডে। অনেকের খোঁজও মিলছে না। তাঁদের কীভাবে উদ্ধার করা যাবে সে প্রসঙ্গে হাওড়া জেলার বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী পুলক রায় বলেছেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি। বাঙালি পর্যটকদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।’
রামরাজাতলার বাসিন্দা সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায় আটকে রয়েছেন বাগেশ্বর এলাকায়। তিনি জানিয়েছেন, আট জন ট্রেকারের একটি দল গিয়েছিলেন উত্তরাখণ্ডে। পিন্ডারি হিমবাহে যাওয়ার কথা ছিল তাঁদের। প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়ে যাওয়ায় তাঁরা সমতলে নেমে আসতে পারেননি। সরযূ নদীর জলস্তর বেড়ে রাস্তাঘাট ছাপিয়ে গেছে। তাছাড়া পাহাড়ি ধসে জাতীয় সড়ক বন্ধ। কীভাবে ফিরে আসা যাবে সেই চিন্তাই করছেন তাঁরা। হিন্দ মোটরের আরও চারটি বাঙালি পরিবার আটকে রয়েছেন উত্তরাখণ্ডে। জানা গেছে, মোট ১২ জনের একটি দল বদ্রীনাথের দিকে রওনা দেন। কিন্তু ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়ে যাওয়ায় তাঁরা ফিরতে পারেননি। বদ্রীনাথের সড়কপথও এখন বন্ধ। ওই পরিবারের অন্য তিনজন দেবাশিস দাস, দেবাঞ্জন পাঠক ও সুখেন্দু দাস যোশীমঠে আটকে পড়েছেন।
আবার হাওড়া থেকে যাওয়া বাংলার সাতজন ট্রেকারের একটি দলের খোঁজও মিলছে না। উত্তরকাশী জেলার বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর জানিয়েছে, ওই দলটির হরশিল থেকে ছিটকুল যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাঁরা পৌঁছতে পারেননি। কোথায় আটকে পড়েছেন তা জানতে হেলিকপ্টার পাঠানো হয়েছে। আমতা থেকে ১৪ জন বাঙালি পর্যটকের একটি দল কাঠগোদামে আটকে রয়েছেন। তাঁদের পরিবার জানিয়েছে, হোটেল খাবার নেই, পানীয় জল নেই, এমনকি বিদ্যুৎ পরিষেবাও বিচ্ছিন্ন। বেশিরভাগ পর্যটকই মোবাইলে চার্জ দিতে পারছেন না, ফলে তাঁরা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারছেন না। অনেকে মাঝরাস্তায় আটকে রয়েছেন। বাসের ভেতরে দিন কাটাতে হচ্ছে।