‘যে পুলিশ একটা কেসের তদন্ত করছে, তাঁকে পর্যন্ত খুন করে দিয়েছে। একটার পর একটা ফেক এনকাউন্টারে খুন করে দিচ্ছে ওরা। এরাই এক একজন সবচেয়ে বড় ডাকাত সর্দার’। উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরের পুলিশ ইনস্পেকটার সুবোধ কুমার সিংয়ের মৃত্যুতে এভাবেই গর্জে উঠলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাজকুলের জনসভা থেকে তীব্র নিন্দা করলেন হিন্দুত্ববাদীদের।
প্রসঙ্গত, উত্তরপ্রদেশের দাদরিতে গোমাংস-গুজব ছড়িয়ে মহম্মদ আখলাককে পিটিয়ে মারার ঘটনায় প্রধান তদন্তকারী অফিসার ছিলেন বুলন্দশহরের পুলিশ ইনস্পেকটর সুবোধ কুমার সিং। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি সেই মামলার অন্যতম সাক্ষীও ছিলেন তিনি। তাই তাঁর প্রাণ যাওয়া কোনও কাকতলীয় ঘটনা নয় বলেই মনে করে মৃত ইনস্পেকটরের পরিবার। তারওপর পুলিশ বাহিনীতে সুবোধ ছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ মুখ। তাই হিন্দুত্ববাদীদের রাগ ছিল তাঁর ওপর। তিনি তাদের নিশানাতেও ছিলেন। এর অন্যতম প্রমান ঘটনায় অভিযুক্ত উত্তরপ্রদেশেরই দাদরির বজরং দলের আহ্বায়ক যোগেশ রাজ। নাম জড়িয়েছে বিজেপি এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদেরও। সুবোধ যে গো-রক্ষকদের তাণ্ডবের বলি, সেটাই স্পষ্ট জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পূর্ব মেদিনীপুরের বাজকুলের সরকারি জনসভায় শুরু থেকেই মমতা ছিলেন আক্রমণাত্মক। সরাসরি বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেন, ‘নোটবন্দীর জেরে মানুষ কাজ হারিয়েছে। অনেক জায়গা থেকে আবার মেরে তাড়াচ্ছে। বিজেপি আসাম থেকে বাঙালি তাড়াচ্ছে, আর গুজরাত থেকে বিহারি। আমরা কাউকে তাড়াই না’।
সভাস্থল জুড়ে তখন শুধুই গেরুয়া শিবির বিরোধী উন্মাদনা। সেই ‘মুড’কে কিছুক্ষণকে উপলব্ধি করলেন মুখ্যমন্ত্রী। গলা চড়িয়ে ফের আক্রমণে ফিরলেন। প্রশ্ন তুললেন, ‘যারা হিন্দু-হিন্দু করে মিথ্যা কথা বলে, তারা হিন্দুধর্মের কতটুকু জানে? বিজেপি কবে জন্মেছে? হঠাৎ এখন মিথ্যা কথা বলতে শুরু করে দিল’? মানুষের জাতপাত তুলে বিজেপি সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়ানোর চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেন মমতা। বলেন, ‘হিন্দু ধর্ম দেখাচ্ছে? হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসছে এই ধর্ম’। তাঁর প্রশ্ন, ‘বেদ, গীতা, রামায়ণ আর মহাভারত যখন ছিল, তখন বিজেপি কোথায়?’ মমতার কথায়, কে ভাই তোমরা হরিদাস! স্বাধীনতার সময়েও তো তোমরা ছিলে না। আর এখন বড় বড় কথা। দাঙ্গা লাগানোর ছক’। প্রত্যয়ী মমতার ঘোষণা, ‘এখানে এসব হবে না, হতে দেব না’।