সম্প্রতি গড়িয়াহাটের কাঁকুলিয়ায় ঘটে যাওয়া জোড়া খুন কাণ্ডে জড়িতরা নিহত কর্পোরেট কর্তা সুবীর চাকির পরিচিত৷ প্রাথমিক তদন্তের পর সে বিষয়ে কার্যত নিশ্চিত পুলিশ৷ তদন্তকারীরা আরও নিশ্চিত, সুবীরবাবু এবং তাঁর গাড়ির চালক রবীন মণ্ডলকে খুন করার জন্য এক বা একাধিক পেশাদার খুনিকে ব্যবহার করা হয়েছে৷ পাশাপাশি কাঁকুলিয়া কাণ্ডের তদন্তে থ্রিডি ইমেজিং প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন তদন্তকারীরা। রবিবার রাতে কাঁকুলিয়া রোডে নিজের বাড়ি থেকেই উদ্ধার হয় কর্পোরেট কর্তা সুবীর বাবু এবং তাঁর গাড়ির চালকের দেহ৷ প্রথম থেকেই পুলিশের সন্দেহ, এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে রয়েছে সুবীরবাবুর বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি৷ কারণ কয়েক বছর ধরেই কাঁকুলিয়া রোডের ওই বাড়িটি বিক্রির চেষ্টা করছিলেন সুবীরবাবু৷ রবিবার বিকেলেও বাড়ি বিক্রি সংক্রান্ত কাজেই কাঁকুলিয়ার বাড়িতে গিয়েছিলেন তিনি৷
পাশাপাশি, তদন্তকারীদের অনুমান, বাড়ি বিক্রি সংক্রান্ত কাজেই রবিবার বিকেলে কাঁকুলিয়া রোডের বাড়িতে এক বা একাধিক ব্যক্তি এসেছিলেন৷ তাঁদের মধ্যে সুবীরবাবুর পরিচিত কেউ সম্ভবত ছিলেন৷ সেই কারণেই নিশ্চিন্ত হয়ে বাড়ির দরজা খুলে দিয়েছিলেন সুবীরবাবুর গাড়ির চালক রবীন মণ্ডল৷ সেই সুযোগেই বাড়িতে ঢুকে পড়েছিল একাধিক আততায়ী৷ পরিচিতরা এসেছিলেন দেখেই সম্ভবত কোনওরকম সন্দেহ করেননি সুবীর বাবু বা তাঁর গাড়ির চালক৷ চিৎকার, চেঁচামেচিও করেননি তাঁরা৷ তদন্তকারীদের ধারণা, প্রথমে সুবীরবাবুকে খুন করা হয়৷ তার পর খুন করা হয় গাড়ির চালক রবীন মণ্ডলকে৷ যেভাবে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গভীর ক্ষত তৈরি করে খুন করা হয়েছে, তাতে একাধিক পেশাদার খুনিকে ব্যবহার করা হয়েছে বলেই নিশ্চিত তদন্তকারীরা৷ ঘটনার সময় সুবীরবাবুর কাঁকুলিয়ার বাড়ির নথি বাইরে তাঁর গাড়িতেই ছিল৷ ফলে তিনি যে বাড়ি বিক্রির কাজেই কাঁকুলিয়ায় গিয়েছিলেন, তা আরও স্পষ্ট৷ কিন্তু বাড়ি বিক্রির বিষয়েই কাউকে ডেকে থাকলে কেন নথি গাড়িতে রেখে সুবীরবাবু ভিতরে ঢুকলেন, সেই প্রশ্নও উঠছে৷
প্রসঙ্গত, কাঁকুলিয়া হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে অত্যাধুনিক থ্রি ডাইমেনশনাল ইমেজিং প্রযুক্তি ব্যবহার করছে পুলিশ৷ এ দিনও লালবাজারের হোমিসাইড শাখার গোয়েন্দারা ঘটনাস্থলে যান৷ নিয়ে যাওয়া হয় পুলিশ কুকুরও৷ ঘটনাস্থল থেকে বালিগঞ্জ স্টেশন পর্যন্ত চলে যায় পুলিশ কুকুর৷ এর পর বালিগঞ্জ স্টেশনের এক ও দুই নম্বর প্ল্যাটফর্মে গিয়ে ফিরে আসে সে৷ পুলিশ সূত্রে খবর, থ্রি ডি ইমেজিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করার চেষ্টা চলছে৷ আততায়ীরা কোন পথে এসেছিল, কোথায় দেহগুলি পড়েছিল, কীভাবে ঘটনা ঘটনা হয়, পুরোটাই এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে নতুন করে সাজানোর চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা৷ যা ভবিষ্যতে আদালতে মামলা চলাকালীন বিচারককেও ঘটনা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দেবে এবং জোরালো প্রমাণ হিসেবে গণ্য হবে৷ এর আগে দেবাঞ্জন দেবের ভুয়ো ভ্যাকসিন কাণ্ডের তদন্তেও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করেছিল পুলিশ৷
উল্লেখ্য, তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, রবিবার কাঁকুলিয়া রোডের বাড়িতে পৌঁছে নিজের মাকে ফোন করেছিলেন সুবীরবাবু৷ বাড়ির ছাদ থেকে জল পডড়ছে বলে জানিয়ে তা সারানোর জন্য মায়ের কাছে মিস্ত্রির খোঁজও করেন তিনি৷ সুবীরবাবু বাড়িতে জানিয়েছিলেন, রাত সাড়ে সাতটা নাগাদ তিনি ফিরে আসবেন৷ কিন্তু তার পরেও দীর্ঘক্ষণ তিনি নিউ টাউনের বাড়িতে না ফেরায় তাঁর মা এবং স্ত্রীর সন্দেহ হয়৷ এর পরেই সুবীরবাবু বা তাঁর গাড়ির চালককে ফোনে না পেয়ে নিজেদের অন্যান্য আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তাঁরা৷ পরে গড়িয়াহাটের বাড়িতে গিয়ে পুলিশে খবর দেন সুবীরবাবুর এক আত্মীয়।