নিম্নচাপের ধাক্কা কাটল বলেই মনে করছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। গত একমাস ধরে দফায় দফায় ঘূর্ণাবর্ত ঘনিয়েছে বঙ্গোপসাগরে। শক্তি বাড়িয়ে নিম্নচাপের চেহারা নিয়ে তাণ্ডব করেছে বাংলার উপকূলে। বিগত তিনদিন ধরে নিম্নচাপের চোখ রাঙানিতে জলভাসি কলকাতা, ভেসেছে দক্ষিণের একাধিক জেল। তবে আজ থেকে আবহাওয়ার কিছুটা উন্নতি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
হাওয়া অফিস জানিয়েছে, বাংলার উপকূল পেরিয়ে ঝাড়খণ্ডের দিকে চলে গেছে নিম্নচাপ। শক্তিও হারিয়েছে। কাজেই প্রবল দুর্যোগের আশঙ্কা আর নেই। কয়েক পশলা বৃষ্টি হতে পারে কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গে। আবহাওয়ার উন্নতি হবে আজ থেকেই।
মধ্যপূর্ব ও সংলগ্ন উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে এই নিয়ে দফায় দফায় ঘূর্ণাবর্ত জন্ম নিল। জোড়া ঘূর্ণাবর্তের রেশ থাকাকালীনই ফের উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের ওপর নতুন করে ঘূর্ণাবর্ত দানা বেঁধেছিল, যার জেরেই এই তুমুল ঝড়বৃষ্টি। আবহবিদরা বলছেন, সমুদ্র জলস্তরের তাপমাত্রা বাড়ছে।
তাতেই ঘনঘন ঘূর্ণাবর্ত দানা বাঁধছে। আরবসাগরে ফের ঘূর্ণাবর্তের পরিমণ্ডল তৈরি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় জন্ম নিচ্ছে। এর নাম রাখা হচ্ছে ‘শাহিন’। তবে এই ঘূর্ণাঝড়ের রেশ বাংলায় পড়বে না বলেই জানিয়েছে হাওয়া অফিস। সৌরাষ্ট্র হয়ে সেটি পাকিস্তানের দিকে চলে যাবে।
মঙ্গল ও বুধবার ভারী বৃষ্টির দাপটে ভুগেছে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলি। জলমগ্ন কলকাতার একাধিক এলাকা। দুই মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, ঝাড়গ্রামে তুমুল ঝড়বৃষ্টি হয়েছে। নাগাড়ে বৃষ্টির দাপটে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বেশইরভাগ এলাকাই জলের তলায়।
বিদ্যুৎ দফতরের আধিকারিকরাও প্রতিটি ওয়ার্ডে নজর রেখেছেন। বিদ্যুৎ ভবনের কন্ট্রোল রুম থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পরিস্থিতি খেয়াল রেখেছেন বিদ্যুৎ মন্ত্রী শ্রী অরূপ বিশ্বাস। বালির বস্তা ফেলে জল আটকানোর ব্যবস্থা হয়েছে বাগজোলায়। সল্টলেকের নীচু এলাকাগুলো থেকে জল বের করতে ১২০টি পাম্প তৈরি রাখা হয়েছিল।
নিউটাউনে তৈরি ছিল ১০০টি পাম্প। ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম চালু হয়েছে নিউটাউন ও সল্টলেকে। বিধাননগরে কিছু জায়গায় ঝড়বৃষ্টির জেরে গাছ উপড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে বলে জানা গেছে। দ্রুত সেগুলি মেরামতি করা হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
প্লাবনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বেশ কিছু জায়গায়। সুন্দরবনের উপকূলবর্তী অঞ্চল, ডায়মন্ডহারবার কার্যত জলমগ্ন। বহু জায়গায় কাঁচা বাড়ি ভেঙেছে, গাছপালা উপড়েছে, বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙএ পড়েছে। ক্ষেতের কাঁচা আনাজ নষ্ট হয়েছে বলে জানা গেছে।
কলকাতার এন্টালি, ঠনঠনিয়া, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, পার্ক স্ট্রিট, এ জে সি বসু রোড, শরৎ বসু রোড, পার্ক সার্কাস, আলিপুর রোড, সাহাপুর রোড, শেক্সপিয়ার সরণি সবজায়গাতেই জলে থৈ থৈ করছে। শহরের নীচু এলাকাগুলো যেমন ইএম বাইপাস, বেহালার কিছু অংশ, জোকা, গার্ডেন রিচ, যাদবপুর-টালিগঞ্জের কিছু এলাকায় নিকাশি ব্যবস্থার জন্য আগেই প্রস্তুতি সেরে রেখেছিল পুরসভা।