গুলাবের প্রভাব কাটতে না কাটতেই বঙ্গোপসাগরে ফের হাজির ঘূর্ণাবর্ত। গত দু’মাস ধরে একের পর এক ঘূর্ণাবর্তের ঝাপটায় জলভাসি কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গ। কিছুদিন আগেই উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে ফণা তুলেছিল জোড়া ঘূর্ণাবর্ত। মৌসুমী অক্ষরেখাকে সঙ্গী করে তুমুল বৃষ্টিতে ভেসেছে দক্ষিণের জেলাগুলি।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, এবার পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণাবর্ত দানা বাঁধছে। শক্তি বাড়িয়ে যা নিম্নচাপে বদলে যাবে। পশ্চিমবঙ্গের উপকূল দিয়ে ঢুকবে স্থলভাগে। এর প্রভাবে আজ থেকেই গাঙ্গেয় বঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।
মধ্যপূর্ব ও সংলগ্ন উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে তৈরি হয়েছে ঘূর্ণাবর্ত। মায়ানমারের ওপর অবস্থান করবে। তারপর শক্তি বাড়িয়ে নিম্নচাপে বদলে যাবে। মঙ্গলবার থেকে এই নিম্নচাপ ক্রমশ এগিয়ে যাবে বাংলার উপকূলের দিকে।
এর প্রভাবে আজ ও আগামীকাল কলকাতা, দুই মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম-সহ দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব জেলাতেই অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।
রবিবার অন্ধ্রপ্রদেশের কলিঙ্গপত্তনমের কাছে আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় গুলাব। এখন শক্তি হারিয়ে নিম্নচাপে বদলে তেলঙ্গানা এবং লাগোয়া ছত্তীসগড়ের ওপর অবস্থান করছে। এই নিম্নচাপ আরবসাগরের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় ফের জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে শক্তি বাড়াতে পারে পারে বলেই মনে করছেন আবহবিদরা।
বর্ষার যে চরিত্র বদলাচ্ছে, তা নিয়ে কয়েক বছর ধরেই সরব আবহবিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদদের একাংশ। আবহবিদরা বলছেন, গত কয়েক বছরে বর্ষার রূপ বদলেছে। বিশেষ করে এ বছর গোড়া থেকেই বাংলায় বর্ষা ছিল দরাজ। একদিকে মৌসুমী অক্ষরেখা সক্রিয়, অন্যদিকে বঙ্গোপসাগরে ঘনিয়ে ওঠা নিম্নচাপ।
দুইয়ের জেরে হুড়হুড় করে জলীয় বাষ্প ঢুকেছে রাজ্যে। সাধারণত সমুদ্রতলের তাপমাত্রা বাড়ছে। তাতেই ঘনঘন ঘূর্ণাবর্ত গানা বাঁধছে এবং কিছু ক্ষেত্রে ঘূর্ণিঝড়ও তৈরি হচ্ছে। তার পরে শক্তি বাড়িয়ে এবং নিম্নচাপের চেহারা নিয়ে গাঙ্গেয় বঙ্গে ঢুকে পড়ছে। এ বছর পুজো অবধি নিম্নচাপের দাপট থাকবে কিনা সে নিয়েও জল্পনা চলছে।
আজ মঙ্গলবার–ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির (৭-২০ সেন্টিমিটার) পূর্বাভাস পূর্ব মেদিনীপুরের দুই জায়গায়, পশ্চিম মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। জারি হয়েছে কমলা সতর্কতা।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার–নিম্নচাপের প্রভাবে কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, ঝাড়গ্রাম, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, বাঁকুড়া, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রামে অতি ভারী বৃষ্টির (৭-১১ সেন্টিমিটার) সম্ভাবনা। হলুদ সতর্কতা জারি হয়েছে উপকূলবর্তী এলাকাগুলোতে।
মঙ্গলবার ঘূর্ণাবর্ত নিম্নচাপের চেহারা নিলে তুমুল বৃষ্টির সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া বইবে উপকূলের জেলাগুলিতে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুরে ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা থেকে সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইবে।
কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ২৪ পরগনায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা থেকে সর্বোচ্চ ৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিবেগে ঝোড়ো হাওয়া বইবে।
হাওয়া অফিস সতর্ক করছে, প্রবল বৃষ্টিতে ভাসতে পারে উপকূলের জেলাগুলি। কলকাতার নীচু এলাকাগুলো ফের জলমগ্ন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
বজ্রপাত থেকে বাঁচতে ঝড়বৃষ্টির সময় খোলা জায়গায় থাকতে নিষেধ করা হয়েছে। জরুরিকালীন পরিস্থিতির জন্য বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর ও জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হলে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দলকে তৈরি থাকতে বলা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা কন্ট্রোল রুম খোলা আছে নবান্নে।
আজ কলকাতায় সকাল থেকে মেঘলা আকাশ। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, বজ্রবিদ্যুৎ সহ ভারী বৃষ্টি হতে পারে। সকালের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৬.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে জলীয়বাষ্পের সর্বোচ্চ পরিমাণ ৯৬ শতাংশ। গতকাল থেকে বৃষ্টি হয়েছে সামান্য।