ক্রমশ বাংলার আকাশে ঘণীভূত হচ্ছে দুর্যোগের মেঘ। বঙ্গোপসাগরের উপর ঘূর্ণাবর্ত ক্রমশ শক্তি বাড়াচ্ছে। মঙ্গলবার তার জেরেই ব্যাপক ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ জেলায়। যার প্রভাব থাকবে বুধবার পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার কলকাতার ভবানীপুর এবং মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুরে উপনির্বাচন। সোমবার নবান্নে দুর্যোগ মোকাবিলায় ফের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে নবান্ন সূত্রে খবর। ত্রাণ শিবিরে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখা, নিচু এলাকা থেকে মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া থেকে কলকাতা-সহ পুর এলাকায় পাম্প লাগানো এবং বিদ্যুতের খোলা তার যাতে না থাকে, তা দেখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে নবান্ন সূত্রে খবর।
যদিও আজ আকাশই পুরোদস্তর পরিষ্কার ছিল। মাঝে মধ্যে সামান্য কালো মেঘের আনাগোনা। ছিটেফোঁটা বৃষ্টি হয়েছে। তবে এই আবহাওয়া সোমবার ভোররাত থেকে ক্রমশ পালটাবে বলেই জানাচ্ছে আবহাওয়া দফতর। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের তরফে সোমবার বিকেলে জানানো হয়েছে, মায়ানমার উপকূলের কাছে অবস্থিত ঘূর্ণাবর্ত মঙ্গলবারের মধ্যে রাজ্যের উপকূলের দিকে সরে আসবে। যত তা দক্ষিণবঙ্গের কাছাকাছি আসবে, ততই বাড়বে বৃষ্টি। যেহেতু প্রায় একই সময়ে একটি ঘূর্ণিঝড় হয়ে গিয়েছে, সে কারণে তা অনেকটা জলীয় বাষ্প টেনে নিয়েছে। তাই ঘূর্ণাবর্তটির নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা কম।
সোমবার নবান্নে মুখ্যসচিব এইচ কে দ্বিবেদী দুর্যোগ মোকাবিলা নিয়ে বৈঠক করেন দক্ষিণবঙ্গের জেলাশাসকদের সঙ্গে। সেখানে কলকাতা পুরসভা ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলির কর্তারাও ছিলেন। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, ছ’টি অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। যার মধ্যে তিনটি বাহিনী থাকবে কলকাতা পুরসভা এলাকার জন্য। নবান্নে ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম খোলা থাকছে। পাশাপাশি জেলাগুলিতেও কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার, জল, ওষুধ ত্রাণ শিবিরগুলিতে রাখা হচ্ছে। বেশ কয়েকটি জায়গা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে ত্রাণ শিবিরগুলিতে নিয়ে আসা হচ্ছে। সমুদ্রে মাছ ধরার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে যাতে দুর্ঘটনা না ঘটে, তার জন্য খোলা তার, লাইটপোস্ট, ডিস্ট্রিবিউশন বক্সে সঠিকভাবে ইনসুলেশন করার জন্য বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার এর প্রভাবে সকাল থেকেই দুই মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হবে। ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে কলকাতা, হাওড়া, হুগলী, ঝাড়গ্রাম এবং উত্তর ২৪ পরগনায়। বুধবার পুরুলিয়া, বাঁকুড়া-সহ পশ্চিমের জেলায় বৃষ্টি বাড়বে। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং সংলগ্ন উত্তর পূর্ব বঙ্গোপসাগরের উপর একটি ঘূর্ণাবর্ত রয়েছে। সেটি বাংলা উপকূলের দিকে সরে আসবে। তার জেরেই এই বৃষ্টি।”
উল্লেখ্য, কলকাতা পুরসভার তরফেও যাবতীয় ব্যবস্থা চূড়ান্ত করে ফেলা হয়েছে। পুর এলাকায় বিপজ্জনক বাড়ি রয়েছে প্রায় ১০০টি। অতি বিপজ্জনক বাড়ি প্রায় হাজার তিনেক। টানা ভারী বৃষ্টি হলে এই অতি বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই সেখান থেকে বাসিন্দাদের স্থানীয় কমিউনিটি সেন্টার বা পুরসভার স্কুলে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেখানে খাবারের ব্যবস্থাও করবে পুরসভা। যে সমস্ত এলাকায় বেশি জল জমে, সেখানে আগে থাকতেই পাম্প তৈরি রাখা হচ্ছে। সব মিলিয়ে গোটা কলকাতায় চারশোরও বেশি পাম্প থাকছে দ্রুত জল বের করে দেওয়ার জন্য। বাতিল করা হয়েছে একাধিক বিভাগের কর্মীদের ছুটি। পুরসভার কন্ট্রোল রুমে থাকবেন মুখ্য প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম। প্রতিটি বরোয় প্রশাসক মণ্ডলীর একজন করে থাকবেন। গঙ্গায় জল বাড়া এবং লক গেট খোলার বিষয়টি নবান্নের সঙ্গে সমন্বয় রেখে করা হবে বলে পুরসভা সূত্রে খবর। এছাড়াও চালু থাকছে বিদ্যুৎ দফতরের কন্ট্রোল রুম।