করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় বসে গিয়েছে দেশের অর্থনীতির চাকা। এরই মধ্যে চোখ রাঙাচ্ছে করোনার তৃতীয় ঢেউ। এদিকে ইতিমধ্যেই পেট্রোল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি সর্বকালীন রেকর্ড গড়েছে। তবে চারিদিকে এত সংকটের মধ্যেও কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই গেরুয়া শিবিরের। আজ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্মদিনে বিজেপি কর্মী সমর্থকদের ধুমধাম, উদযাপন দেখে তাই সমালোচনায় মুখর অনেকেই। সকলেরই এক বক্তব্য, যতই বিজেপি প্রধানমন্ত্রীকে বিশ্বগুরু হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করুক মোদী দেশের বিশ্বকর্মা হয়ে উঠতে পারেননি। দেশের অর্থনৈতিক মন্দাই তা বলে দিচ্ছে। বিরোধী রাজনীতিকরা তো বটেই, সমাজের অন্যান্য অংশের মানুষও এই আড়ম্বরকে ভাল ভাবে নিচ্ছেন না।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার কার্যত গোটা বিজেপি পার্টি মোদীর জন্মদিন উদযাপনকে দলের কর্মসূচী হিসেবে পালন করছে রাজ্যে রাজ্যে, জেলায় জেলায়। কোথাও বাজি ফাটানো, কেক কাটা, মোদীর কাটআউটকে দুধ-গঙ্গাজল দিয়ে স্নান করিয়ে তাতে মালা পরানো—কিচ্ছু বাদ নেই। বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও নেতারা পৃথক ভাবে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন পালন করছেন। গতবার যেমন কাক ভোরে ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরে যজ্ঞ করতে বসেছিলেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব। এবার তা না করলেও মোদীর মঙ্গল কামনায় মাতাবাড়িতে পুজো দিতে গিয়েছেন বিপ্লব। আবার বাংলার রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষ্যে রাজভবনের বাগানে চারা পুঁতেছেন। গোয়ার রাজ্যপাল আবার ৭১টি বৃদ্ধাশ্রমে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছেন।
একটা সাংগঠনিক দলে কীভাবে একজন ব্যক্তির জন্মদিনকে উদযাপন করা পার্টি কর্মসূচী হতে পারে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। মোদীর জন্মদিন পালনে গেরুয়া শিবরের ঢক্কানিনাদ নিয়ে শিক্ষাবিদ মিরাতুন নাহার বলেন, ‘আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী নিজেকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারেন না। তিনি আত্মকেন্দ্রিক। দেশের মানুষের মন বুঝতে প্রধানমন্ত্রী ব্যর্থ। তিনি নিজেকে সাজাতে ভালোবাসেন। এরকম মানুষ দেশের মাথায় বসে রয়েছেন। তাই আমরা চূড়ান্ত বিপর্যয়ের মুখোমুখি। যে কারণে দুর্মূল্যের বাজার।’ তাঁর সাফ কথা, প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন পালন করার এই ধুমধামের কোনও কারণ দেখিনা। এই সংকটের পরিস্থিতিতে এত বড় করে জন্মদিন পালন ন্যাক্কারজনক।
অন্যদিকে, লোকসভার তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কী অর্জন করেছেন? তাঁর বোঝা উচিত, এটা জন্মদিন পালনের সময় নয়। পেট্রোলের দাম বৃদ্ধি, করোনা পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থ প্রধানমন্ত্রী। দেশের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। এরমধ্যে এত ধুমধাম করে জন্মদিন পালন করতে পারছেন কী করে? কোনও সংবেদনশীল মানুষ এটা করতে পারেন না!’ আবার, নাট্যকার-পরিচালক-অভিনেতা দেবেশ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘একজন নার্সিসিস্ট, মেগলোম্যানিয়াক মানুষ এরকমটা করবেই। উনি নিজেকে সবথেকে বেশি ভালোবাসেন। সবাই জানে এই পরিস্থিতিটা সেলিব্রেট করার মতো নয়। কিন্তু উনি তো এরকমটা করবেনই। এতে আমি অবাক হচ্ছি না।’