রবিবারই মুজফফরনগরের কিষাণ মহাপঞ্চায়েত থেকে কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে মোদী সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন কৃষকরা। বলেছিলেন, আরও শক্তিশালী হবে আন্দোলন। ওই হুমকির ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই মঙ্গলবার কৃষকদের মিনি-সেক্রেটারিয়েট ঘেরাও অভিযানকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠল কারনাল। আঁচ ছড়িয়ে গেল কিষাণ মহপঞ্চায়েতেও। অশান্তির আশঙ্কায় জারি করে দেওয়া হল ১৪৪ ধারা। রাজ্যের পাঁচ জেলায় বন্ধ করে দেওয়া হল ইন্টারনেট ও এসএমএস পরিষেবা। চাপের মুখে এদিন সকালেই বিক্ষোভকারী কৃষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হয় হরিয়ানা সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর বার্তা দিয়েছিলেন, “আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান হবে।” সেইমতো ১১ জনের এক প্রতিনিধিদল প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে। কিন্তু কৃষক নেতৃত্বের বক্তব্য, বৈঠক সফল হয়নি।
এদিন সারারাত কারনালের মিনি সচিবালয় ঘেরাও করে রাখার পরিকল্পনা কৃষকদের। রাত কাটানোর জন্য তাঁবুর অর্ডার দেয় সংযুক্ত কিষান মোর্চা। অন্যদিকে, বিক্ষোভস্থলে বসে রাকেশ টিকায়েত বলেন, আমরা মিনি সেক্রেটারিয়েট দখল করে নিয়েছি। যতক্ষণ সুবিচার পাব না, ততক্ষণ এভাবেই আন্দোলন চলবে। উল্লেখ্য, গত ২৮শে আগস্ট কারনালেই কৃষকদের বিক্ষোভে পুলিশের লাঠি চালানোর অভিযোগ ওঠে। পুলিশ আধিকারিক আয়ূষ সিনহার ভাইরাল ভিডিওকে কেন্দ্র করেও বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে। অভিযোগ, ওই ভিডিওতে উপস্থিত পুলিশকর্মীদের তিনি আন্দোলনকারীদের মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ওই আধিকারিককে ইতিমধ্যেই বদলি করে দেওয়া হলেও কৃষকদের দাবি, তাঁকে বরখাস্ত করতে হবে। একইসঙ্গে খুনের মামলাও রুজু করতে হবে। প্রধানত এই দাবিতেই কারনালের আনাজ মাণ্ডি থেকে মিনি-সেক্রেটারিয়েট পর্যন্ত মিছিল করে গিয়ে মিনি-সচিবালয় ঘেরাওয়ের পরিকল্পনা করেন কৃষকরা। আর তা ঘিরেই উত্তেজনা চরমে ওঠে মঙ্গলবার।
উল্লেখ্য, মোদী সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলেছে গেরুয়াশিবিরের সংগঠন ভারতীয় কিষাণ সঙ্ঘ। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বদ্রীনারায়ণ চৌধুরী জানিয়েছেন, “কৃষক আন্দোলনকে অনেক বেশি সহানুভূতির সঙ্গে দেখতে হবে সরকারকে। বুধবার প্রতিটি জেলা শহরে বিক্ষোভ দেখানো হবে।” কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েত ও যোগেন্দ্র যাদবের অভিযোগ, তাঁদের আটক করেছে পুলিশ। যদিও অর্ধেক রাস্তাতেই তাঁদের পুলিসের বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। রাকেশ টিকায়েতের অভিযোগ, আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ব্যবহার করেছে হরিয়ানা পুলিশ। সংযুক্ত কিষান মোর্চার দাবি, পুলিশের ছ’টি নাকা পেরিয়ে মিনি-সচিবালয় ঘেরাও করেছেন কৃষকরা। এদিনের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে তুলকালাম হয় কারনালে, ভাঙে ব্যারিকেড। দফায় দফায় রাকেশ টিকায়েত সহ অন্যান্য নেতাদের পথ আটকায় পুলিশ। টিকায়েত নিজেই জানিয়েছেন, কৃষকরা মিনি-সচিবালয়ে পৌঁছে গিয়েছেন। দাবি না মেটা পর্যন্ত ঘেরাও-আন্দোলন চলবে। এদিকে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় কারনালে আজ, বুধবার রাত ১১টা ৫৯ পর্যন্ত ইন্টারনেট, এসএমএস পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হরিয়ানা প্রশাসন। যদিও, কৃষক নেতা গুরনামসিং চাদুনি বলেন, “আলোচনাতে অংশ নেব। দাবি না মেটা পর্যন্ত আন্দোলনও চলবে। সবটাই হবে শান্তিপূর্ণভাবে।”