একদিকে যখন পেট্রোল-ডিজেলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে রান্নার গ্যাসের দাম, তখন মোদী সরকারের সৌজন্যে তাতে ভর্তুকি উঠে যাওয়ার জোগাড়। বাদ যাননি গরিবরাও। কারণ, উজ্জ্বলা যোজনাতেও বহু গ্রাহক ভর্তুকি পাচ্ছেন না। পেলেও তা নামমাত্র। এদিকে, মোদী সরকারের অন্যতম ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী মানুষদের বিনামূল্যে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে গ্যাসের দাম যেভাবে ক্রমশ বাড়ছে এবং পাল্লা দিয়ে ভর্তুকি কমছে, তাতে এই দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী মানুষগুলি আবার আগের মত কাঠের উনুনে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
রাজ্যের অন্যান্য জায়গার মতো হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়ার গ্রামীণ অঞ্চলেও এই একই অবস্থা। সেখানকার হতদরিদ্র মানুষগুলির পক্ষে মাসে প্রায় হাজার টাকা খরচ করে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার কেনা স্বপ্নের মত। তার ওপর করোনার ধাক্কায় অনেকেরই রোজগারের কোনও ঠিক ঠিকানা নেই। পূর্ণ মালির মত বৃদ্ধারা উজ্জ্বলা প্রকল্পে গ্যাস সংযোগ পেয়ে আশার আলো দেখেছিলেন। ভেবেছিলেন তাঁদের হাড়ভাঙা পরিশ্রম এতদিনে কিছুটা হলেও লাঘব করল কেন্দ্রের মোদী সরকার। কিন্তু কয়েক মাস যেতে না যেতেই বাস্তব পরিস্থিতিটা তাঁরা টের পেয়ে যান। গত দেড় বছর ধরে প্রায় রেকর্ড গতিতে দাম বাড়ছে রান্নার গ্যাসের। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গ্যাস সিলিন্ডারে ভর্তুকির পরিমাণ কমাচ্ছে কেন্দ্র। বাধ্য হয়ে পূর্ণ মালিরা আবার পাতা, শুকনো ডাল-পালা কুড়িয়ে কাঠের উনুনে জ্বাল দিয়ে দু’বেলা দু’মুঠো ভাত ফুটিয়ে খাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি যে প্রকল্পগুলিকে প্রচারের হাতিয়ার করেছিল তার মধ্যে অন্যতম উজ্জ্বলা যোজনা। কেন্দ্রের নেতা-মন্ত্রীরা হামেশাই দাবি করে এসেছেন তাঁদের জন্যই দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী মানুষেরা গ্যাসে রান্না করার সুযোগ পেয়েছেন। যদিও বাস্তব ছবি অন্যরকম কথা বলছে। গরিবদের গ্যাস সংযোগের সুবিধা দিতে এবং পরিবেশে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা কমাতে প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা চালু করা হয়েছিল। এই প্রকল্পের অধীনে গ্যাস সংযোগ নেওয়ার সময় সিলিন্ডারের জন্য কোনরকম অর্থ জমা রাখতে হয় না। আবার বিনামূল্যে গ্যাসের রেগুলেটর, পাইপ সহ যাবতীয় নথিপত্র পেয়ে থাকেন গ্রাহক। এটুকুই পার্থক্য আর পাঁচটা সাধারণ গ্রাহকের সঙ্গে।
এছাড়া এই প্রকল্পে গ্যাস সংযোগ পেলে গ্যাসের ওভেন এবং প্রথম সংযোগের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে বিশেষ ছাড় পেয়ে থাকেন গ্রাহকেরা। এক সময় সিলিন্ডার পিছু কেন্দ্র প্রায় দেড়শ টাকার কাছাকাছি ভর্তুকি দিত। সেই সময়ে বাজারে গ্যাসের দাম অনেকটাই কম ছিল। যার ফলে এই দরিদ্র মানুষগুলি কোনরকমে হলেও গ্যাস কিনতে পারতেন। কিন্তু বর্তমানে পেট্রোলিয়াম সংস্থাগুলি কলকাতা জোনে সিলিন্ডার পিছু মাত্র ১৯.৫৮ টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৯০০ টাকা খরচ করলে তবেই গ্যাস সিলিন্ডার কিনতে পারবেন উজ্জ্বলা গ্রাহকরা। বর্তমান আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিতে হতদরিদ্র মানুষগুলির পক্ষে এত টাকা খরচ করে গ্যাস সিলিন্ডার কেনা প্রায় অসম্ভব।