বিশ্বভারতীতে ছাত্র ছাত্রীদের আন্দোলন অব্যাহত। এবার উপাচার্য বিদ্যুত চক্রবর্তীকে তিন বেলা খাবার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন ছাত্র-ছাত্রীরা। বিশ্বভারতীতে তিন ছাত্রকে বরখাস্ত করার প্রতিবাদে গত ২৭ তারিখ থেকে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তাঁরা। উপাচার্যের বাসভবনের সামনে মঞ্চ করে বিক্ষোভ অবস্থানে বসেছেন । প্রত্যেক দিন বাড়ছে বিক্ষোভের ঝাঁঝ। বুধবারও তাঁদের সমর্থনে মিছিল করবে ছাত্র পরিষদ।
অন্যদিকে, ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বিভিন্ন ক্ষেত্রে বলছেন যে, তাঁর বাড়িতে কোনও রকম খাবার ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এই দাবিকে সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে, উপাচার্যের তিন বেলা খাবার দেওয়ার আয়োজন করলেন ছাত্রছাত্রীরা।
আজ সকালে উপাচার্যের বাসভবন পূর্বিতার সামনের গেটের তলা দিয়ে ডিম কলা পাউরুটি খাবার পৌঁছে দিয়েছেন ছাত্রছাত্রীরা। ছাত্রদের দাবি, তাঁদের আন্দোলনকে বিভিন্নভাবে কলুষিত করার জন্য অপপ্রচার চালাচ্ছেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। সেই কারণেই এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যেই এহেন অভিযোগ তুলে উপাচার্য বিদ্যুত চক্রবর্তী বিশ্বভারতীর আচার্য তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখেছেন। সূত্রের খবর চিঠিতে তিনি লিখেছেন, তাঁকে ঘেরাও করে রাখা হয়েছে। তাঁর বাড়িতে খাবার দিতে দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি কাজের লোকদেরও ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। ঘেরাও থাকার ফলে তাঁকে নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
বুধবার সকালেই বিশ্বভারতীর উপাচার্যের বাসভবনে শাকসবজি নিয়ে দুই যুবক বাইকে ঢুকতে যাচ্ছিলেন। তাঁরা দুধ-আলুও দিতে আসেন। সেই সময় ছাত্রছাত্রীরা দেখতে পেলে তাঁদের বাধা দেন। তাঁদেরকে আটকান এবং ফেরত পাঠিয়ে দেন। ছাত্র ছাত্রীদের বক্তব্য, তাঁরা উপাচার্যকে খাবার দিচ্ছেন। আলাদা করে খাবার দেওয়ার আর কোনও প্রয়োজন নেই।
ক্রমেই জটিল হচ্ছে বিশ্বভারতীর পরিস্থিতি। পড়ুয়া বিক্ষোভের জেরে বাড়তি নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশ প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। পুলিশের কাছে চিঠি মারফত বাড়তি নিরাপত্তা চেয়েছেন উপাচার্য। এই চিঠির কথা স্বীকার করেছেন জেলার পুলিশ সুপার নগেন্দ্র ত্রিপাঠী। এদিকে উপাচার্য যখন বাড়তি নিরাপত্তা চাইছেন, তখন শ্লীলতাহানির অভিযোগে থানায় এফআইআর করেন দুই ছাত্রীও!
বিশ্বভারতীর উপাচার্যের আবেদন প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার জানিয়েছেন তিনি পুরো বিষয়ের উপর বাড়তি নজর দিচ্ছেন। উল্লেখ্য, এরপরেই বুধবার বিশ্বভারতীর গেটের সামনে গত দিনের চেয়ে জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা। চোখে পড়েছে বাড়তি পুলিশ নজরদারি। এদিকে সোমবার উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ফেস্টুন লাগাতে গেলে নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁদের শ্লীলতাহানি করে বলে শান্তিনিকেতন থানায় অভিযোগ করেছেন দুই ছাত্রী। তাঁদের বিস্ফোরক দাবি, সেখানে উপস্থিত উপাচার্য বলেন, “মেয়েরা নয়, শুধু পুরুষ কর্মীরা সামলাক।”
শুক্রবার, বিশ্বভারতীর মূল সেন্ট্রাল অফিস ঘেরাও ব্যাপক বিক্ষোভ দেখান পড়ুয়ারা। সেই বিক্ষোভ তুলতে গেলে কার্যত হাতাহাতি বাধে বিশ্বভারতী নিরাপত্তাকর্মী ও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে। বিশ্বভারতী নিরাপত্তারক্ষীরা প্রথমে ছাত্রদের গায়ে হাত তোলেন বলে অভিযোগ। বিশ্বভারতীর উপাচার্যের বিদুৎ চক্রবর্তী-র সিএস বা আপ্ত সহায়কের গাড়ি দাঁড় করিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চান পড়ুয়ারা। তখন তিনি পড়ুয়াদের গাড়ি চাপা দিতে উদ্যত হন বলে বিস্ফোরক অভিযোগ আন্দোলনরত পড়ুয়াদের। এর পর থেকেই উপাচার্যের বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করে করেন পড়ুয়ারা।
তিন পড়ুয়াকে বরখাস্ত করার প্রতিবাদে ও তার কারণ জানতে চেয়ে আন্দোলনে নেমেছেন ছাত্রছাত্রীরা। উপাচার্যের বাড়ির বাইরে আন্দোলনে অনড় তাঁরা। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে একাধিক। শিক্ষকমহলের একাংশের প্রশ্ন, কেন এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করছেন না উপাচার্য? প্রশাসনিক প্রধান হিসাবে উপাচার্য এই দায় কি এড়িয়ে যেতে পারেন, সে প্রশ্নও উঠছে।