পশ্চিম দিল্লীতে এক দলিত দিনমজুর তাঁর স্ত্রী ও ১৩ বছরের কিশোরী কন্যাকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে বাস করতেন। বাড়িওয়ালার সঙ্গে তাঁদের ভাল সম্পর্ক ছিল। বাড়িওয়ালার অনুরোধে মেয়েকে তাঁর এক আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়েছিলেন ওই দিনমজুর। প্রবীণ নামে সেই আত্মীয় গুরগাঁওতে থাকেন। প্রবীণের মেয়ে ওই দলিত কিশোরীর সমবয়সী। বাড়িওয়ালার স্ত্রী বলেছিলেন, গুরগাঁওতে গেলে দলিত কিশোরী প্রবীণের মেয়ের সঙ্গে খেলাধুলো করতে পারবে।
গত ১৭ জুলাই ওই কিশোরী প্রবীণের সঙ্গে তাঁর গুরগাঁওয়ের বাড়িতে যায়। তার বাবা জানিয়েছেন, ২৩ অগাস্ট দুপুর তিনটের সময় ফোনে তাঁদের জানানো হয়, মেয়েটি খাদ্যে বিষক্রিয়ার ফলে মারা গিয়েছে। চার ঘণ্টা পরে বাড়িওয়ালার স্ত্রী প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সে মেয়েটির দেহ দিল্লীতে নিয়ে আসেন।
এরপর বাড়িওয়ালারা দ্রুত মেয়ের শেষকৃত্য করার জন্য দিনমজুরের ওপরে চাপ দিতে থাকেন। তাঁরা কাঠ ও পুজোর অন্যান্য সামগ্রী কিনে আনেন। মেয়েটির পরিবার তখন দিশাহারা হয়ে পড়েছিল। এমন সময় হস্তক্ষেপ করেন প্রতিবেশীরা। তাঁরা মেয়েটির মৃতদেহ দেখতে চান। দেহ দেখে চমকে ওঠেন সকলে। তার মুখে ও পিঠে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন ছিল। তখন মেয়েটির বাবা পুলিশকে খবর দেন।
দিল্লী পুলিশের এসিপি ওয়েস্ট রাজিন্দর বলেন, “মেয়েটির বাবা-মায়ের অভিযোগ শুনে আমরা প্রবীণ ও তাঁর আত্মীয়দের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করেছি। মেয়েটির দেহ ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছিল। আমরা জানতে পেরেছি, তাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। আমরা পকসো আইনে মামলা করেছি।” মেয়েটির বাবা বলেন, দিন দশ-পনেরো আগে তার সঙ্গে ফোনে আমার কথা হয়েছিল। সে বেশি কিছু বলতে চায়নি। এখন মনে হচ্ছে, তখনই মেয়েকে ফিরিয়ে আনা উচিত ছিল।
পুলিশ দেহটি ময়না তদন্তে পাঠায়। প্রবীণকে গ্রেফতার করা হয়। বাড়িওয়ালা ও তাঁর স্ত্রী মেয়েটিকে খুন করার ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিলেন কিনা, তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়। ময়না তদন্তে জানা যায়, মেয়েটির গোপন অঙ্গে আঘাত করা হয়েছিল। তাকে ধর্ষণের পরে খুন করা হয়েছে।
দিল্লীর বাবু জগজীবন রাম হাসপাতালে মেয়েটির দেহের ময়না তদন্ত হয়। সেখানকার ডাক্তাররা জানিয়েছেন, গলা টিপে ওই কিশোরীকে হত্যা করা হয়েছে। মেয়েটির মা বলেন, – “আমরা বাড়িওয়ালাদের সম্মান করতাম। কিন্তু তারা আমার মেয়েকে হত্যা করেছে। রাখী বন্ধনের দিন আমি তাদের পায়ে ধরে বলেছিলাম, গুরগাঁওতে প্রবীণের ঠিকানাটা দিন। আমি মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে চাই। কিন্তু তারা আমাকে ঠিকানা দেয়নি।”