“দায়িত্ব রয়েছে বুদ্ধিজীবীদেরও, রাষ্ট্রের তরফে প্রচার করা যে কোনও মিথ্যাকে প্রকাশ্যে আনার, সত্য উদ্ঘাটনের।” এমনই মন্তব্য মন্তব্য সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের। ‘আওয়ার ট্রুথ ভার্সেস ইওর ট্রুথ’, বিতর্ক ছিল এই বিষয়েই। অর্থাৎ যা একজনের কাছে সত্য হিসাবে প্রতিভাত, তা অন্যের কাছে নাও হতে পারে। শনিবার প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি এম সি চাগলা স্মারক বক্তৃতায় বিচারপতি চন্দ্রচূড় এই মন্তব্য করেন। জোর দেন সংবাদমাধ্যমের বাকস্বাধীনতার উপরেও। বলেন, সংবাদমাধ্যমের উচিত, যে কোনও রকম প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে, তা রাজনৈতিক হোক বা অর্থনৈতিক, সত্য প্রকাশ করা। যাতে প্রশাসনও প্রয়োজনে কোনও পদক্ষেপ করতে পারে কিংবা নীতি নির্ধারণ করতে পারে। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক দেশে সরকারের অনেক দায়িত্ব থাকে। দায়িত্ব থাকে, মিথ্যা, মিথ্যা বিশ্লেষণ এবং ভুয়া খবর সম্পর্কে তথ্য নিজেদের কাছে রাখা এবং মানুষকে সে বিষয়ে সতর্ক করা।
পাশাপাশি বিচারপতি সতর্ক করেন, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারের তরফে যে সমস্ত তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে তার সব কিছুই অন্ধভাবে বিশ্বাস করার ব্যাপারেও। বলেন, “যে কোনও ব্যাপারে যা রাষ্ট্রের তরফে প্রকাশ করা হচ্ছে সেই কথা বা তথ্যের উপরেই অন্ধভাবে বিশ্বাস ও ভরসা না করা উচিত কোনও ব্যক্তির। সর্বগ্রাসী প্রশাসন বহু সময়েই ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে ভুল তথ্য দিয়ে মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করে। সারা বিশ্বেই আমরা এমন অনেক ঘটনার ছবি দেখতে পাই। কোভিড-১৯ সম্পর্কেও বহু দেশ ভুয়ো তথ্য দিয়েছে।”
এরপর ভুয়ো তথ্যের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সারা বিশ্বের করোনা প্যান্ডেমিকের থেকে কম ভয়ংকর হয়ে দাঁড়ায়নি এই ইনফোডেমিক।” উল্লেখ্য, সোশ্যাল মিডিয়া বা অন্য নেট মাধ্যমে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য দিয়ে মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করার এই প্রবণতা সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বহু সময়েই সচেতন করেছে। এই জায়গাতেই বুদ্ধিজীবীরা এবং সংবাদমাধ্যম সঠিক পথে পরিচালিত করার দায়িত্ব পালন করতে পারেন বলে উল্লেখ করেন বিচারপতি চন্দ্রচূড়। তুলে ধরেন যে, বহু সময়েই প্রকৃত সত্যের থেকে ‘আমার সত্য’ বড় হয়ে দাঁড়ায়। অর্থাৎ প্রত্যেকের নিজের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যা কিছু সত্যি বলে মনে হয়। এর বাইরে বেরিয়ে আসার জন্যও সকলকে ওয়াকিবহাল করেন চন্দ্রচূড়।