বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের সঙ্গে শিবরাজ সিং চৌহানের দ্বন্দ্ব সর্বজনবিদিত। সুমিত্রা মহাজনের সঙ্গে তাঁর বিরোধও কারও অজানা নয়। একসময় শিবরাজের শিল্প মন্ত্রীও ছিলেন তিনি। কিন্তু শিবরাজের সঙ্গে ঝামেলার জেরে মন্ত্রীত্ব খোয়াতে হয় তাঁকে। আর এবার মধ্যপ্রদেশ বিধানসভা ভোটেও টিকিট জোটে নি তাঁর। দলও কৈলাসকে আধিপত্য গোটানোর নির্দেশ দিয়েছে। তাই এবার ছেলে আকাশ বিজয়বর্গীয়র জন্য তদ্বির করতে নেমেছেন তিনি।
সেখানেও খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি কৈলাস। বড় ছেলে আকাশের জন্য টিকিট আদায় করতেও বহু কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারন সম্পাদককে। তাঁর প্রথম পছন্দ ছিল ইন্দোরের মউ আসনটি। চেয়েছিলেন নিজের আসনটি ছেলেকে জন্মদিনে উপহার দেবেন। কিন্তু ‘পরিবারতন্ত্রসুলভ’ ভাবনায় বালি পড়েছে। কৈলাসের প্রত্যাশা পূরণ করেনি দল। এমনকি প্রথম ২ টি প্রার্থী তালিকাতেও ওঠেনি ছেলের নাম। শেষে অনেক দৌড়ঝাঁপ করে তৃতীয় প্রার্থী তালিকায় ছেলে আকাশের নাম তুলতে পেরেছেন কৈলাস। ছেলের জন্য জোটাতে পেরেছেন ইন্দোর ৩ আসনটি। তবে এই আসনটি মোটেই পছন্দ নয় কৈলাসের। কিন্তু তিনি নিরুপায়।
আসলে মউ আসনটি না মেলায় কৈলাস চেয়েছিলেন ইন্দোর ২ আসন। ভেবেছিলেন ওই আসনের মায়া ত্যাগ করবেন গত বারের বিজয়ী তথা কৈলাসের অনুগামী রমেশ মান্দালা। কিন্তু বাস্তবে তেমনটা ঘটেনি। একসময়ের অনুগামী তথা ‘রাজনৈতিক শিষ্য’ এখন কৈলাস বিরোধী শিবিরে। নানা বিষয়ে দ্বিমত হওয়ায় কৈলাসের থেকে মুখ ফিরিয়েছেন তিনি। দলেও কৈলাসের থেকে তাঁর গুরুত্ব জুটছে বেশী। ইন্দোরে বলাবলি হচ্ছে, কৈলাসের বিকল্প পেয়ে গিয়েছে বিজেপি। তাই ডানা ছাঁটা হয়েছে তাঁর।
ছেলেকে জেতাতে এখন উঠে পড়ে লেগেছেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়। তাঁর অফিসে ফোন করলেই বলা হচ্ছে, ‘কৈলাসজী প্রচারে ব্যস্ত’। একে তো পছন্দের আসন মেলেনি। তারওপর মধ্যপ্রদেশের বিজেপি কর্মীরাই মুখ ফেরাচ্ছে তাঁর থেকে। এমন পরিস্থিতিতে ইন্দোর ৩ আসন থেকে ছেলেকে জেতাতে ঘুম ছুটেছে তাঁর। এককথায়, ছেলেকে বাজি ধরেই রাজনৈতিক জুয়া খেলতে নেমেছেন কৈলাস।
এখন প্রশ্ন, যেভাবে নিজের ছেলেকে প্রার্থী করে পরিবারতন্ত্র কায়েম করলেন কৈলাস, তারপরে কোন মুখে বিজেপি বা তিনি পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলবেন? দলের নেতা কর্মীদেরই বা এ নিয়ে শাসন করবেন কোন অধিকারে? ওয়াকিবহাল মহলের মতে, মমতার সমালোচনা করা বিজয়বর্গীয় নিজের ঘরেই পরিবারতন্ত্রের তীরে বিদ্ধ।
দলে গুরুত্ব হারিয়েছেন বাংলায় বিজেপির দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়। বিজেপি কর্মীরাও তাঁর কাজ-কর্মে খুশি নন। বাংলাতেও খুব একটা সুবিধা করতে পারছেন না। তাই ছেলের ‘ভবিষ্যৎ’ গড়ে দিতে উঠে পড়ে লেগেছেন তিনি। কিন্তু যদি ইন্দোর ৩ আসন থেকে ছেলে হারে? তখন যে কৈলাসের আমও যাবে ছালাও যাবে সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই কোনও।