এবার পূর্ত দপ্তরের অধীনে থাকা রাজ্যের ছোট-বড় মিলিয়ে আরও ২০ থেকে ২৫টি ব্রিজ সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলে নতুন করে তৈরি করতে হবে। সম্প্রতি ওই দপ্তরের অধীনে থাকা ৪১৪টি ব্রিজের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে চারটি বিশেষজ্ঞ সংস্থা। তাদের রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তার স্বার্থে প্রায় ২৫টি ব্রিজ ভেঙে ফেলা দরকার বলে মনে করছে দপ্তর। কারণ, দীর্ঘদিনের পুরোনো হওয়ায় এগুলির স্বাস্থ্যের অবস্থা ভালো নয়। কোনওটির পিলার দুর্বল হয়ে গিয়েছে, কোনওটির আবার গার্ডার চেঞ্জ করতে হবে। এই ব্রিজগুলির ভেঙে নতুন করে বানাতে গেলে কত খরচ হবে এবং কী ধরনের পরিকল্পনা দরকার তা নিয়ে প্ল্যানিং করা হচ্ছে।
এর আগে মাঝেরহাট ব্রিজ ভেঙে পড়ার জন্য রাজ্যের সব ব্রিজ-উড়ালপুলের স্বাস্থ্য পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশে পূর্ত দপ্তর, কেএমডিএ, এইচআরবিসি তাদের অধীনে থাকা ব্রিজগুলির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করায়। মুম্বই, দিল্লী ও কলকাতার বিশেষজ্ঞ সংস্থা দিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়। সেই সব সংস্থার দেওয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রতিটি ব্রিজের ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেএমডিএ শহরের ব্রিজগুলির ইতিমধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। উল্টোডাঙা উড়ালপুলের মতো কয়েকটি ব্রিজের উপর দিয়ে ভারী যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বহু ব্রিজের সামনে হাইট বার লাগানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, ৪১৪টির মধ্যে ১৫১টি ব্রিজে দ্রুততার সঙ্গে মেরামতির কাজ শেষ হয়েছে। পূর্ত দপ্তরে জমা পড়া বিশেষজ্ঞ সংস্থাগুলির রিপোর্ট অনুযায়ী খবর এমনটাই। বর্তমানে ২০২টি ব্রিজে মেরামতির কাজ চলছে। ৬১টি ব্রিজ আপাতত ঠিক আছে। কিন্তু প্রায় ২৫টি ব্রিজের অবস্থা এমন সঙ্কটজনক অবস্থায় রয়েছে যে তাদের দ্রুত ভেঙে ফেলা দরকার। তা নাহলে যে কোনও এগুলি ভেঙে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তবে কমবেশি সবক’টি ব্রিজের বয়স হয়েছে। তাই ব্রিজগুলি নিয়মিত নজরদারি করার জন্য এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে তাঁদের পূর্তদপ্তরে রিপোর্ট পাঠাতে বলা হয়েছে। সমস্ত ব্রিজ ও উড়ালপুলে নজরদারি করতে পূর্ত দপ্তরের মধ্যে ব্রিজ মনিটরিং সেলও তৈরি করা হয়েছে। একজন চিফ ইঞ্জিনিয়ার ওই সেলের দায়িত্বে রয়েছেন।
প্রসঙ্গত,মাঝেরহাট ব্রিজ ভেঙে পড়ার পর নতুন করে তৈরি করেছে পূর্ত দপ্তর। তার পরেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে গিয়ে ধরা পড়ে টালা ব্রিজের বেহাল অবস্থা। প্রখ্যাত ব্রিজ বিশেষজ্ঞ ভি কে রায়না গোটা ব্রিজটি খতিয়ে দেখে ভেঙে ফেলার পরামর্শ দেন। তারপর তা গত বছর ১৫ই আগস্ট থেকে সেটি ভেঙে ফেলে নতুন করে তৈরির কাজ শুরু হয়। আগামী বছর ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে তা শেষ হওয়ার কথা। এখন পূর্ত দপ্তর পরিকল্পনা করছে, কোনও ব্রিজের স্বাস্থ্যের কী অবস্থা তার গুরুত্ব বুঝে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পরিবর্তন করা হবে। এ ব্যাপারে একটি সামগ্রিক পরিকল্পনা রিপোর্ট তৈরি করা হচ্ছে। যা মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পেশ করা হবে। তাঁরাই সিদ্ধান্ত নেবেন, কোন ব্রিজ ভেঙে।ফের বানানো হবে নতুন করে।