আফগান মাটি চেনেনই না, আমেরিকা থেকে ‘উড়ে এসে জুড়ে বসা’ গনি এখন ‘বিশ্বাসঘাতক’
উপায় না দেখে অগত্যা বেরিয়ে এলেন সাহারা। কিন্তু বাইরে তখন অন্য দৃশ্য। দুরন্ত গতিতে ছুটে আসা তালিবানের জিপ দেখে যে দিকে দু’চোখ যায়, ছুটছে মানুষ। তখনই ঠাহর হল, রাস্তাঘাটে মহিলা বলতে একা তিনি। সিনেমার লোক বলে এলাকার মানুষ মান্যিগন্যি করেন, কিন্তু শিল্প-সচেতন মানুষ হিসেবে তালিবানের নজরে তিনি ঘোর শত্রু। তাই আগুপিছু না ভেবে প্রাণপণে দৌড় লাগালেন নিজেও। অভ্যাসবশত মোবাইলের ক্যামেরায় কয়েক সেকেন্ডের সেই দৃশ্য বন্দি করে নিয়েছিলেন সাহারা। সেই ভিডিয়োই তালিবানি আফগানিস্তানে মহিলাদের অবস্থার প্রতিচ্ছবি হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে নেট দুনিয়ায়।
শুধু তাই নয়, কাবুলের দখল নেওয়ার ঢের আগেই কন্দহরের আজিজি ব্যাঙ্কে তালিবান-তাণ্ডব চলে বলে অভিযোগ। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ওই ব্যাঙ্কে কর্মরত ৯ জন মহিলাকে কার্যত ঘাড় দিয়ে ব্যাঙ্ক থেকে বার করে বাড়িতে ঢুকিয়ে দিয়ে আসে তালিবান। ভবিষ্যতে কোনও দিন যাতে কাজে ফেরার ‘দুঃসাহস’ না দেখান, এই বলে তাঁদের হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টস বিভাগে কর্মরত ৪৩ বছরের নুর খতেরা সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘কাজ করতে না পারাটা সত্যিই অদ্ভুত লাগছে। কিন্তু এখন এমনই পরিস্থিতি। কিচ্ছু করার নেই।’’ শুধু তাই নয়, কর্মক্ষেত্রে শুধু পুরুষদেরই নিয়োগ করতে হবে বলে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে তালিবানের তরফ থেকে সাফ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান নুর।
রবিবার তালিবানের হাতে কাবুল এসে যাওয়ার পর থেকে নেটমাধ্যমে বিশ্বের তাবড় রাষ্ট্রনেতাদের কাছে একাধিক আর্জি জানিয়েছেন আফগানিস্তানের মানবাধিকার কর্মী-সহ অনেকেই। বিশেষ করে তালিবান রাজত্বে মহিলাদের অবস্থা নিয়ে আন্তর্জাতিক সাহায্যের আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু দেশ-বিদেশের সংবাদমাধ্যমে গত ৪৮ ঘণ্টায় যত ছবি সামনে এসেছে কাবুলের, তাতে রাস্তাঘাটে মহিলাদের অনুপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। একমাত্র ব্যতিক্রম অলিগলির বোরখার দোকানগুলি। তাদের রাজত্বে মহিলাদের কী কী শিষ্ঠাচার মেনে চলতে হবে, আগেই তার লিখিত বিজ্ঞপ্তি জারি করে দিয়েছে তালিবান। মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত আবৃত রাখতে বলা হয়েছে সকলকে। তাই খোলা বাতাস ছেড়ে ঘরের কোণে ঢুকে গেলেও, বোরখার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারছেন আফগান মহিলারা।
অন্যদিকে ভাইরাল হয়েছে একটানা কান্নার শব্দ। কাবুল বিমানবন্দরে মা-বাবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয় এক শিশু। তারপর তার কান্না শুনেই শিশুটিকে উদ্ধার করেন বিমানবন্দরের কর্মীরা। তার মা-বাবার খোঁজ মেলেনি তখনও। তালিবান রাজধানী কাবুলে দখল নেওয়ার পর একটার পর এমন একেকটা মর্মান্তিক ছবি, ভিডিয়ো ভেসে উঠছে নেটমাধ্যমের পাতায়। বিমানবন্দরের কর্মীদের অনুমান, শিশুটি হুড়োহুড়ির মধ্যে মা-বাবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অনুমান, তাকে নিয়ে দেশ ছাড়ার জন্যই সম্ভবত অন্য অনেকের মতো তার পরিবারও বিমানবন্দরে এসেছিল। তারপর কোনওভাবে সে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। প্রাণে বাঁচতে বিমানে ওঠার জন্য হুড়োহুড়ি, উড়ন্ত বিমান থেকে ছিটকে পড়ে যাওয়ার দৃশ্য সকলেরই চোখের সামনে ভাসছে। এর মধ্যে এক শিশুর কান্নার মর্মান্তিক ছবি ছড়িয়ে পড়ল নেটমাধ্যমে।