তাহলে কি কোথাও রাম-বামের সখ্যতা একটু হলেও উদ্ঘাটিত? নেটদুনিয়ায় উঠেছে রোল। রীতিমতো বিপাকে সিপিআইএম। অসন্তোষের ছায়া দলের অন্দরেও। কড়া সমালোচনার বাণ ছুঁড়ছেন আদ্যন্ত বাম সমর্থকরাও। আসা যাক প্রসঙ্গে। করোনা পর্বের গোড়া থেকে যাদবপুরে শ্রমজীবী ক্যান্টিন চালাচ্ছে সিপিএম। সোমবার তা ৫০০ দিনে পা দিয়েছে। আর এমন দিনেই বিতর্কে জড়ালেন তরুণ সিপিএম নেতা শতরূপ ঘোষ। যা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া রীতিমতো তোলপাড়। শতরূপের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে একটি ছবি ঘিরেই বিতর্কের সূত্রপাত। ছবিটি দেখে অখুশি একাধিক বাম-সমর্থক। চূড়ান্ত বিরক্তি প্রকাশ করেছেন অভিনেতা রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিও ফেসবুক পোস্টে জানিয়ে দিলেন, সিপিএমের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করলেন তিনি।
উল্লেখ্য, এই ছবিতে শতরূপের সঙ্গে ছবিতে দেখা গিয়েছে তিন অভিনেতা-অভিনেত্রীকে। রূপা ভট্টাচার্য, অনিন্দ্য পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বর্ষীয়ান পার্থসারথি বন্দ্যোপাধ্যায়। সমস্যাটা পার্থবাবুকে নিয়ে নয়। একথা কারওরই অজানা নয় যে, রূপা এবং অনিন্দ্য বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে অনিন্দ্যকে বারবার কমিউনিস্ট বিরোধিতায় ব্যাপক সরব হতে দেখা গিয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বাংলার বাম জমানা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে চাঁচাছোলা সমালোচনা ও বিদ্রূপ করতেন তিনি। একদা গেরুয়া শিবিরের সদস্য এই দুই অভিনেতা-অভিনেত্রী সম্প্রতি বিজেপি ছেড়েছেন। সোমবার শ্রমজীবী ক্যান্টিনের ৫০০ দিন পূর্তির উদযাপনে যোগ দেন। শতরূপের ফেসবুক পেজে তা দেখে বিক্ষুব্ধ অনেকেই। রাহুল পোস্ট করে লিখেছেন, “আমি কোনও প্রলোভন বা পাওয়ারের কারণে রাজনীতি করি না। আমার রাজনীতি একান্তই আদর্শগত। সিপিএমের মঞ্চে যদি টিকিট না পাওয়া হতাশ বিজেপি জায়গা পায় তাহলে আমি আজ এই মুহূর্ত থেকে সিপিএমের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলাম। আমার বামপন্থা সিপিএমের মুখাপেক্ষী নয়। যে একবারের জন্য ও সাম্প্রদায়িক দলের সাথে জড়িয়েছে, বিশেষত সে যদি সেলিব্রিটি হয়, তার সাথে কোনওদিন এক মঞ্চে আমি থাকব না। সিপিএম ভেবে দেখুক আমাদের প্রয়োজন,না তাদের।” ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বামমনস্ক অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্রও।
রাহুলকে বাম জনানায় সিপিএমের সঙ্গে তেমন দেখা যায়নি। একুশের আগে সিপিএমের দুঃসময়ে রাহুল-সহ অনেক সেলেব্রিটিই লালঝাণ্ডা-সমর্থনে পথে নেমেছিলেন। একুশের ভোটে সিপিএম শূন্য হওয়ার পরেও বিভিন্ন কর্মসূচিতে তাঁকে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু শতরূপের এমন পোস্ট যেন ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল ঘোষিত বামপন্থী অভিনেতার। এখন প্রশ্ন, অনিন্দ্য, রূপারা কি এমনিই এসেছিলেন? নাকি তাঁদের ডাকা হয়েছিল? একদা বিজেপিপন্থী দুই অভিনেতা-অভিনেত্রী না ডাকতেই সিপিএমের চালানো শ্রমজীবী ক্যান্টিনে চলে যাবেন এমনটা অনেকেই বিশ্বাস করতে চাইছেন না। কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন, শ্রমজীবী ক্যান্টিনে যে কেউ আসতে পারেন। আবার সিপিএমের কেউ কেউ এও বলেছেন, শতরূপের ডাকে সাড়া দিয়েই ওঁরা এসেছিলেন। যদিও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি শতরূপের কাছে। তবে এহেন ঘটনায় চরম অসন্তুষ্ট বাম-সমর্থকদের একটা বড় অংশ। শোনা যাচ্ছে, দলের মধ্যেও মাথাচাড়া দিয়েছে ক্ষোভ।