নিজের চোখের সামনে ছেলেবেলায় দেখেছেন তালিবানি শাসনের চূড়ান্ত বর্বরতা। মোরগের ডাকে নয়, বরং বন্দুক ও কামানের গোলাগুলির শব্দে ঘুম ভাঙত তাঁর। তাঁর দুঃস্বপ্নে এখনও ভেসে ওঠে কাবুলের ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে সাধারণ মানুষের গণহত্যার ছবি। জোহিব আমিরি স্বপ্ন দেখেছিলেন, শান্তির বাতাস বইবে তাঁর দেশে। ভয়, সন্ত্রাস শব্দগুলো অভিধানের পাতাতেই কেবল লেখা হয়ে থাকবে। আমিরির স্বপ্ন সফল হয়নি। আদৌ হবে কিনা, কেউ জানেন না। আমিরিও তা জানেন না। সুদূর কানাডার মন্ট্রিয়ালে বসে দেশের মানুষের জন্য চোখের জল ফেলছেন তিনি। সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আফগানিস্তান ফুটবলের অন্যতম স্তম্ভ বলছেন, “আমার দেশ এবং দেশের মানুষ খুব খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এটা অত্যন্ত পীড়াদায়ক। বিশ্বাস করুন, খুবই মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।”
প্রসঙ্গত, মার্কিন সেনার তাড়া খেয়ে প্রায় দুই দশক আগে কাবুল থেকে পালিয়েছিল তালিবান। আফগানরা বুক ভরে নিশ্বাস নিয়েছিলেন। বোরখার আড়ালে প্রাণ খুলে হেসেছিলেন আফগান সুন্দরীরা। কিন্তু চলতি বছর আমেরিকা সরে যেতেই গণতন্ত্র সেখানে ভূলুণ্ঠিত। বাঁধভাঙা জলের মতো কাবুলে ঢুকে পড়ে তালিবান জঙ্গিরা। দখল করে নেয় রাজধানী। শহরের একমাত্র সুরক্ষিত বিমানবন্দর থেকে নাগরিকদের সরিয়ে নিতে বারবার ওঠানামা করছে মার্কিন বিমান। অবরুদ্ধ শহরের রাস্তায় দিশেহারা হয়ে পথ খুঁজছে হাজার হাজার মানুষ। দেশের রাজপথে দেখা যাচ্ছে অভূতপূর্ব দৃশ্য। গাড়ির ইঞ্জিন চালিয়ে রেখে দরজা খুলে মার্কিন বিমানে ওঠার জন্য দৌড় লাগাচ্ছে ভয়ার্ত মানুষ। তালিবান শাসকদের দৌলতে বদলে গিয়েছে দেশের নামও। দেশটির নতুন নাম এখন ‘ইসলামিক এমিরেট অফ আফগানিস্তান।’
আমিরি যখন দেশ ছাড়েন, তখন তাঁর বয়স মাত্র ৮। ওই সময়ই দেশে থাবা বসিয়েছে তালিবান। সেই ভয়াবহ সময়ের অভিজ্ঞতার বর্ণনা করতে গিয়ে আফগানিস্তানের প্রাক্তন অধিনায়ক বলছেন, “তালিবানরা যখন প্রথম ক্ষমতা দখল করল, সেই দুঃসহ স্মৃতি আমার এখনও বেশ মনে আছে। ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকত দেশের মানুষজন। চোখের সামনেই দেখেছি তা। সব কিছু বোঝার মতো বয়স তখন আমার ছিল না। অনেকেই আশা করেছিলেন এরকম দিন যেন আর ফিরে না আসে। কতটা ভয়ঙ্কর ছিল সেই সব দিন, তা বর্ণনা করতে পারব না। সেই সব দিনগুলোর কথা মনে করলে এখনও আমার বুক কেঁপে ওঠে।” আফগানদের দেশে পট পরিবর্তন নতুন কোনও ঘটনা নয়। ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে ১৯৯০ সালে জন্ম হয় আমিরির। তার ঠিক এক বছর আগে মুজাহিদদের সঙ্গে লড়াইয়ে ক্লান্ত সোভিয়েত বাহিনী ফিরে গিয়েছে দেশে। আফগান কমিউনিস্টদের পতনে স্তিমিত লালঝড়। তার দু’বছর বাদেই কাবুলের দখল নেয় মুজাহিদরা। বাধ্য হয়ে ইস্তফা দেন সোভিয়েতপন্থী আফগান প্রেসিডেন্ট মহম্মদ নাজিবুল্লা। সময় যত এগোতে থাকে মুজাহিদদের দুর্নীতি ও অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে সাধারণ মানুষ।