রবিবার দেশের ৭৫তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে ভাষণে লালকেল্লায় দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্য ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। স্বাধীনতা সংগ্রামী মাতঙ্গিনী হাজরা নাকি অসমের! এমনই শোনা গেছে মোদীর বক্তৃতায়। এ নিয়ে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে শুরু রাজনৈতিক তরজাও। বাংলা সম্বন্ধে কোনও ধারণা নেই বিজেপির, তাই ওই ধরনের ভুল বক্তৃতা আউড়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এমনই কটাক্ষ তৃণমূলের। বিজেপি অবশ্য এটাকে ছোটখাটো ভুল হিসেবেই দেখেছে।
তবে মোদীর এই মন্তব্যকে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের শিক্ষা হিসেবেই দেখেছেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তাঁর কথায়, “এটা মোদীর দোষ না। কারণ তাঁরা আরএসএসের থেকে যে শিক্ষা পান, তাতে ভারতের সংস্কৃতি জানা সম্ভব নয়। তাঁরা তো একটাই জিনিস জানেন, তা হল সাম্প্রদায়িক বিভাজন। আর বাংলার সম্বন্ধে তো তাঁদের কোনও ধারণাই নেই।” ফিরহাদ আরও বলেন, “স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্থান অনেক উপরে। তিনি না জানলে এটা তাঁর দোষ, এতে তাঁদের সম্মান কমবে না। স্বাধীনতা সংগ্রামীরা আমাদের হৃদয়ে আছেন। ভারতের স্বাধীনতার গন্ধে আছেন।” তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেনের মতে, “এটা নতুন কিছু নয়। এর আগেও বিজেপি নেতারা মনীষীদের নিয়ে ভুল মন্তব্য করেছিলেন।”
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের ওই অংশ নিয়ে শাসকদলের তরফে নিন্দা করা হলেও বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এটা কোনও বড় ব্যাপার নয় বলেই দাবি করেন। তিনি বলেন, “এটা ছোটখাটো ভুল। ভারতবর্ষে হাজার হাজার এ রকম মহাপুরুষ এসেছেন। তাঁরা দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। কোনও কারণে ছোটখাটো ভুল হতেই পারে। তাই এটাকে বড় করে দেখার দরকার নেই। এ নিয়ে যাঁরা এত কষ্ট পাচ্ছেন, তাঁরা মাতঙ্গিনী হাজরার জন্য কী করেছেন।” এ নিয়ে ইতিমধ্যেই নেটমাধ্যমে উঠেছে হাসির রোল।
পাশাপাশি, অন্যের লিখে দেওয়া ভাষণ পড়ে নাটক করার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছেন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। টুইটে তিনি লেখেন, “মাতঙ্গিনী হাজরা অসমের? প্রধানমন্ত্রী কি পাগল হলেন? নিজে জানেন না। আবেগ নেই। অন্যের লিখে দেওয়া ভাষণ পড়ে নাটক করতে গেলে এই হয়। এটা বাংলার প্রতি অপমান। প্রধানমন্ত্রী ক্ষমা চান। ওঁদের পূর্ব মেদিনীপুরের গদ্দারও ক্ষমা চেয়ে বিবৃতি দিন।” প্রসঙ্গত, মাতঙ্গিনী হাজরা ১৯৪২-এ ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনে যোগ দিয়ে শহীদ হন। তিনি তমলুকের ‘গান্ধী বুড়ি’ হিসেবেও পরিচিত। ফলে তাঁর সঙ্গে অসমের কখনও কোনও সম্পর্ক ছিল কি না, তা মনে করতে অক্ষম ইতিহাসবিদরাও।