বৈবাহিক সম্পর্কেও কি ধর্ষণ সম্ভব? আলবাত সম্ভব। শুক্রবার এমনই ঐতিহাসিক রায় দিল কেরল হাইকোর্ট। ৬ বছর ধরে চলা একটি পুরনো মামলার প্রেক্ষিতে কেরল হাইকোর্টের রায় নারী অধিকারকেই আরেকবার প্রতিষ্ঠা দিল। কেরল হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্টতই নির্দেশ দিল, সম্মতি ছাড়া স্ত্রীর সঙ্গে শরীরিক সম্পর্ক ধর্ষণের সমান, তা নিয়ে কোনও মতবিরোধ থাকতে পারে না। এখানেই থেমে থাকেননি বিচারপতিরা, আদালতের পর্যবেক্ষণ, ‘স্ত্রীর শরীরের উপর স্বামীর অতিরিক্ত কোনও অধিকার বর্তায় না। স্বামী স্ত্রী দুজনেরই সমান অধিকার রয়েছে। সম্মতির বাইরে জোর করে শরীরিক সম্পর্ক ধর্ষণের সমান অপরাধ বলেই গৃহীত হবে। এটা মানসিক ও শারীরিক ধর্ষণের সমতুল্য।’ হাইকোর্টের নির্দেশ, ‘বৈবাহিক ধর্ষণও ডিভোর্সের জন্য যুক্তিগ্রাহ্য কারণ হিসেবে গৃহীত হবে।’
প্রসঙ্গত, বৈবাহিক ধর্ষণের প্রেক্ষিত আদালতে একটি হলফনামা দিয়ে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার দাবি করেছেন, বৈবাহিক সম্পর্কে শারীরিক সম্পর্কের বিষয়টি ধর্ষণের মতো অপরাধের মতো গণ্য হলে বিয়ে প্রতিষ্ঠানটা নিয়েই প্রশ্ন উঠে যাবে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ইচ্ছের বিরুদ্ধে যৌন সম্পর্কে ধর্ষণের অপরাধ হয় না বলে অবস্থান নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সরকারের যুক্তি, এতে বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠানেই অস্থিরতা তৈরি হবে। স্বামীদের হেনস্থা করার জন্যও এটি হাতিয়ার হয়ে উঠবে।
প্রসঙ্গত, দিল্লিতে নির্ভয়া-কাণ্ডের পরে ধর্ষণের বিরুদ্ধে আইন কড়া করতে প্রয়াত বিচারপতি জে এস বর্মার নেতৃত্বে একটি কমিটি তৈরি হয়েছিল। বর্মা কমিটিরও সুপারিশ ছিল, বৈবাহিক ধর্ষণকে আইনি অপরাধের তালিকায় ফেলা হোক। কিন্তু মনমোহন সরকারও সেই সুপারিশ মানেনি। একই অবস্থান নিয়েছে মোদি সরকারও। এর আগে বৈবাহিক সম্পর্কে ধর্ষণকে অপরাধের তকমা দেওয়ার আর্জি জানিয়ে দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল কয়েকটি সামাজিক ও মহিলা সংগঠন। তাতেই আপত্তি তুলে মোদি সরকার সরকারের আরও যুক্তি, ভারতের মতো দেশে সাক্ষরতা, আর্থিক ক্ষমতার অভাবের মতো সমস্যা রয়েছে। সমাজের মানসিকতা, বৈচিত্র্য, দারিদ্রও সমস্যা। তাই এ বিষয়ে পশ্চিমের দেশগুলিকে অন্ধভাবে অনুসরণ করা যায় না। মোদি সরকারের এই অবস্থানের ঘোরতর সমালোচনা করেছিল নারী অধিকারের পক্ষে আন্দোলনকারীরা। কিন্তু এদিন কেরল হাইকোর্টের ঐতিহাসিক রায়ে জয় পেলেন তাঁরা।