একুশের ভোটে ভরাডুবি হয়েছে সংযুক্ত মোর্চার। কংগ্রেসের মতোই খাতা খুলতে পারেনি সিপিএমও। তারপরই ভোট প্রচারে বিজেপি-বিরোধিতায় তাদের যে ঘাটতি ছিল, নির্বাচনী পর্যালোচনায় তা কবুল করে নিয়েছে তারা। এবার পার্টিকর্মীদের জন্য চালু হচ্ছে নয়া সিলেবাস। যার মূল কথা হল, বিজেপি আর তৃণমূল এক নয়। ৫ আগস্ট ভারতে কমিউনিস্ট পার্টি তৈরির অন্যতম পুরোধা মুজফফর আহমেদের জন্মদিবস। সিপিএম প্রতি বছর এই দিনে নানাবিধ কর্মসূচী করে। তবে এবার শাখায় শাখায় পাঠচক্র করবে বিধানসভায় শূন্য হয়ে যাওয়া সিপিএম। যেখানে দলীয় সদস্যদের বোঝানো হবে তৃণমূল আর বিজেপি এক নয়। যে স্লোগান দেওয়া হয়েছিল তা সম্পূর্ণ ভুল। দলের কর্মসূচীগত বোঝাপড়ার সঙ্গে তা খাপ খায় না।
আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের তরফে একটি নোট জেলায় জেলায় পাঠানো হয়েছে, যাতে হাফ ডজন বিষয় রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম তৃণমূল আর বিজেপির সম্পর্ক নিয়ে সিপিএম নেতারা ভাঙা রেকর্ডের মতো গত পাঁচ-সাত বছর ধরে যা বাজিয়ে এসেছেন তা সম্পূর্ণ ভুল। নথিতে লেখা হয়েছে, ‘বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের বিষয়ে পার্টির অবস্থান নিয়ে, কিছু স্লোগান নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। পার্টির কর্মসূচিগত বোঝাপড়া হল বিজেপি আর অন্য কোনও রাজনৈতিক দল এক নয়। কারণ বিজেপিকে পরিচালনা করে ফ্যাসিবাদী আরএসএস। এটাই পার্টির বোঝাপড়া, কিন্তু নির্বাচনের সময়ে কোথাও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে বিজেপি আর তৃণমূল সমান।’
সিপিএম রাজ্য কমিটি পাঠচক্রের যে নোট তৈরি করেছে তাতে প্রথমে বলেছে, ২০০৮ থেকে পার্টির জনসমর্থন যে ভাবে ক্ষইতে শুরু করেছিল তা রোধ করা যায়নি। সেই ক্ষয়ের বিশ্লেষণ জরুরি বলেও উল্লেখ করা হয়েছে সিপিএমের নথিতে। অর্থাত্ সিপিএম নেতৃত্ব স্বীকার করে নিয়েছে, ২০০৮ সালে পঞ্চায়েতে ভোট থেকে যে ক্ষয় শুরু হয়েছিল ১৩ বছর ধরে তার যথাযথ বিশ্লেষণ হয়নি। তারপর তিনটি লোকসভা, তিনটি বিধানসভা, আরও দুবার পঞ্চায়েত ও দুবার পুর ভোট গিয়েছে। সবেতেই দেখা গিয়েছে সিপিএমের রক্তক্ষরণের ধারাবাহিকতা। যা একুশে রক্তশূন্যতার জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে সিপিএমকে।
সিপিএম নেতারা প্রায়ই বলতেন, তৃণমূল আর বিজেপির লড়াই আসলে গড়াপেটা। পথসভা থেকে জনসভার বক্তৃতায় উঠে আসত দিদি-মোদী সেটিংয়ের গল্প। কিন্তু আলিমুদ্দিন স্ট্রিট এই নোটে স্পষ্টতই স্বীকার করে নিয়েছে, উনিশের নির্বাচন স্পষ্ট করে দিয়েছে দুই দলের লড়াই গড়াপেটা নয়। আবার, নয়ের ধাক্কা সামলে এগারোয় সিপিএম ঘুরে না দাঁড়ালেও উনিশের নির্বাচনের ধাক্কা সামলে একুশে যে তৃণমূল ঘুরে দাঁড়িয়েছে, সিপিএমের নথিতে তারও উল্লেখ রয়েছে। এবং এক্ষেত্রে দিদিকে বলো ও দুয়ারে সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে বলেও উল্লেখ রয়েছে সিপিএমের নোটে।