গত শুক্রবারই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থায় কেন্দ্রের মালিকানা ৫১ শতাংশের নীচে নামিয়ে আনার পথ খুলতে সংসদে বিল পেশ করেছেন। সাধারণ বিমা ব্যবসা (জাতীয়করণ) আইনের সংশোধনী বিলে সরকারি বিমা সংস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের অংশীদারিত্ব কমপক্ষে ৫১ শতাংশ রাখার শর্ত তুলে দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে সরকারের থেকে বেসরকারি সংস্থার হাতে বিমা সংস্থার নিয়ন্ত্রণ তুলে দেওয়ার পথও তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এবার রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থার বেসরকারিকরণ আটকানোর দাবি জানিয়ে সীতারমণকে চিঠি দিলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।
প্রসঙ্গত, ফেব্রুয়ারি মাসে বাজেট পেশের সময়েই সীতারমণ ঘোষণা করেছিলেন, চলতি বছরে দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ও একটি বিমা সংস্থার বেসরকারিকরণ করা হবে। সরকারি সূত্রে খবর, নীতি আয়োগের সুপারিশ মেনে চলতি বছরে ইউনাইটেড ইন্ডিয়া ইনশিওরেন্স সংস্থার বেসরকারিকরণের পথে হাঁটবে মোদী সরকার। এরই প্রতিবাদে সীতারমণকে চিঠি লিখে অমিত মিত্র জানিয়েছেন, এই সংস্থার বেসরকারিকরণ হলে নানা আর্থিক সমস্যা মাথাচাড়া দেবে। বিমাকারী সাধারণ মানুষের আস্থাও নড়ে যাবে।
তৃণমূল সূত্রের খবর, পেগাসাস-কাণ্ডে সংসদে যেমন প্রতিবাদ চলছে, চলবে। পাশাপাশি, রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থার বেসরকারিকরণের প্রতিবাদেও তৃণমূল সরব হবে। কীভাবে বিরোধীদের সঙ্গে মিলে এই বেসরকারিকরণ আটকানো যায়, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। অমিত মিত্র চিঠিতে লিখেছেন, ইউনাইটেড ইন্ডিয়া ইনশিওরেন্সে বিমাকারীর সংখ্যা ১.৭৪ কোটি। সংস্থায় ১৩,৯৬১ কর্মী রয়েছেন। মোট প্রিমিয়াম জমার পরিমাণ ১৭,৫১৫ কোটি টাকা। এর সিংহভাগই গরিব মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ। শুধু তা-ই নয়। ইউনাইটেড ইন্ডিয়া সরকারি ঋণপত্র, বন্ডে ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি লগ্নী করেছে।
তাঁর মতে, দেশের অধিকাংশ মানুষের আর্থিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এলআইসি প্রধান অবলম্বন। এলআইসি দেশের অর্থনীতিতে ৩৬.৭৬ লক্ষ কোটি টাকা লগ্নি করেছে। তার মধ্যে প্রায় ২৪ কোটি টাকা সরকারি ঋণপত্রে। এলআইসি-র কাছে সরকার, সরকারি সংস্থা ও কর্পোরেট ক্ষেত্রের ঋণের পরিমাণ ২১ হাজার কোটি টাকার বেশি। অমিতের মতে, এলআইসি-র বেসরকারিকরণ হলে ৩০ কোটি বিমাকারী মানুষকে অনিশ্চয়তার মুখে ফেলা হবে। ১২ থেকে ১৫ কোটি এজেন্টের জীবিকা, ১.১৪ লক্ষ কর্মীর চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে।
সংসদে বিল পেশ করে সীতারমণ দাবি করেছেন, সরকারের লক্ষ্য বেসরকারিকরণ নয়। সরকার শুধু শেয়ার ছাড়তে চাইছে, যাতে সাধারণ মানুষও শেয়ার কিনে লগ্নি করতে পারে, আবার সংস্থাও শেয়ার বেচে মূলধন জোগাড় করতে পারে। কিন্তু বিরোধীদের প্রশ্ন, মোদী সরকার তো বাজেটেই চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার মধ্যে একটি বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। এখন তা হলে আর ভণিতা করছে কেন? শুধু সাধারণ বিমা সংস্থা নয়, চলতি বছরে এলআইসি বা জীবন বিমা নিগমেরও শেয়ার বাজারে ছাড়তে চাইছে মোদী সরকার।