একুশের ভোটযুদ্ধে বিজেপিকে রুখে দিয়ে ফের বাংলায় ক্ষমতায় এসেছে তাঁর দল। তৃতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হয়ে দিল্লীর মাটিতে রেখেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাতেই এই গোটা সপ্তাহজুড়ে দেশের কাছে মমতা দুটো অবস্থান তুলে ধরতে সমর্থ হলেন। বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো বিরোধী নেত্রী এবং এমন একজন মুখ্যমন্ত্রী, যিনি রাজ্যের স্বার্থে ও দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পথ ধরে চলেন।
দিল্লী পৌঁছেই মমতার প্রথম চালটি দিলেন কংগ্রেসের একের পর এক হেভিওয়েট নেতাদের সঙ্গে বৈঠক সারলেন। কমল নাথ, অভিষেক মনু সিংভির পর মমতা ‘চায়ে পে চর্চা’য় গেলেন সোনিয়া ও রাহুল গান্ধীর সঙ্গে। আসলে মমতা জানেন, ২০২৪-এর বড় লড়াইয়ের আসরে কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়েই চলতে হবে। সেই বাস্তবতা মেনেই এখন থেকেই কংগ্রেসের সঙ্গে সেতুবন্ধনের কাজ তিনি শুরু করলেন নিজেই।
তবে, শুধু কংগ্রেসকেই নয়। প্রতিটি বিজেপি বিরোধী আঞ্চলিক দলকেই এক ছাতার তলায় আনার কাজও সুকৌশলে শুরু করে দিলেন বাংলার জননেত্রী। সেই সূত্রেই তাঁর বৈঠক অরবিন্দ কেজরিওয়াল বা ডিএমকে সাংসদ কানিমোঝির সঙ্গে। তিনি একইসঙ্গে কথা চালিয়ে গিয়েছেন লালু প্রসাদ যাদব ও এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পাওয়ারের সঙ্গে। মমতা নিজমুখেই বলেছেন, ‘আঞ্চলিক দলগুলি শক্তিশালী এবং তাঁদের সকলকে একসঙ্গে চলতে হবে। এই লড়াই মোদী ও ভারতের লড়াই।’
কিন্তু মমতা একজন মুখ্যমন্ত্রীও। তাই রাজ্যের জন্য দাবি আদায় করাও তাঁর দায়িত্ব। যতই নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তাঁর রাজনৈতিক যুদ্ধ থাকুক, তিনি রাজ্যের স্বার্থে বসেছেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে। দেখা করেছেন সড়ক ও পরিবহণ মন্ত্রী নীতিন গাডকড়ির সঙ্গেও। দুটি বৈঠকেই মমতার দাবি ছিল ভ্যাকসিন, রাজ্যের নাম বদল, বাংলার রাস্তাঘাট সম্প্রসারণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আসলে এই দুই বৈঠকে মমতা নিজেকে তুলে ধরেছেন একজন দায়িত্বশীল মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকায়।
তবে, এখানেই শেষ নয়, বিজেপি বিরোধিতায় মুখর হন, এমন মানুষরাও মমতার নজর এড়িয়ে যায়নি। তাই তিনি দেখা করেছেন জাভেদ আখতার, শাবানা আজমির মতো মুখের সঙ্গেও। মমতার সঙ্গে দেখা করে জাভেদও পরিবর্তনের আওয়াজ তুলেছেন। ২০১১ সালে বাংলায় পরিবর্তনের আওয়াজ ওঠার সময়ও তিনি বাম বিরোধী সবরকম শক্তিকে এক ছাতার তলায় এনেছিলেন। সেই ফর্ম্যাটই এবার তিনি কাজে লাগাচ্ছেন ২০২৪-এর বড় লড়াইয়ে।
শুধু তাই নয়, সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনাতেও তিনি সুকৌশলে নিজেকে মুখ হিসেবে নয়, বরং একজন সৈনিক হিসেবে তুলে ধরেছেন। বলেছেন, ‘কাউকে নেতৃত্ব দিতে হয়। আমার মতামত চাপিয়ে দিচ্ছি না। যে কেউ ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে বিরোধীদের প্রধানমন্ত্রী মুখ হতে পারেন।’ অর্থাৎ, বিরোধী জোটের মধ্যে স্বচ্ছতা ধরে রাখতে তৎপর তিনি।