মিশন ২০২৪। ঠিক তার আগেই লক্ষ্য প্রতিবেশী রাজ্য। তৃতীয় বার বাংলা জয় সারা হয়ে গিয়েছে, এবার তাই লক্ষ্যে দিল্লি বিজয়। আর সেই সূত্রেই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজর ২০২৪ সালের লোকসভা ভোট। সেই লক্ষ্যেই একাধিক রাজ্যে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য এগোচ্ছে তৃণমূল। আর তাতেই প্রথম পদক্ষেপ হল ত্রিপুরা রাজ্য। সেই লক্ষ্যেই মন্ত্রী-সাংসদ সহ একাধিক নেতা হাজির হচ্ছেন ত্রিপুরার মাটিতে। তবে সবচেয়ে বড় চমক, ত্রিপুরায় আসছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়।
বিজেপি ছেড়ে দলে ফিরে এসেছেন মুকুল রায়। আর ত্রিপুরায় ফের সংগঠন ঢেলে সাজাতে সেই মুকুলকে কাজে লাগাচ্ছে এ রাজ্যের শাসক দল। এতেই নড়েচড়ে বসেছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। বাংলার মতো ভরাডুবি যাতে ত্রিপুরায় না হয়, সেই কারণে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে গেরুয়া শিবির। ত্রিপুরা বিজেপির ‘বিরোধী গোষ্ঠীর’ নেতা সুদীপ রায়বর্মণকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন মোদী-অমিত শাহরা। তাই সুদীপের মোকাবিলা করতে ঘর গোছানোয় মন দিয়েছে বিজেপি। কারণ সুদীপের হাত ধরেই ত্রিপুরা বিজেপিতে বড় ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আর তা আটকাতেই ত্রিপুরায় হঠাৎ সক্রিয় হয়ে উঠেছে কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্বও। ফলে অভিষেক বন্দোপাধ্যায় ত্রিপুরায় এসে পৌছনোর দিনে সুদীপ কি করেন তা নিয়ে চলছে কানাঘুষো।
ইতিমধ্যেই ত্রিপুরায় সংগঠন পোক্ত করছে তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে গতকাল, বুধবার আগরতলায় হাজির হন মন্ত্রী মলয় ঘটক, ব্রাত্য বসু ও শ্রমিক সংগঠনের নেতা ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার হাজির হয়েছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা তথা প্রধান জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও ব্রায়ান এবং কাকলি ঘোষ দস্তিদার। বিজেপির মন বুঝতে, কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতা বিএল সন্তোষ ইতিমধ্যেই বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বিজেপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক হলেন বিএল সন্তোষ। বিপ্লব দেব বিরোধী ৬ বিধায়ককে নিয়ে বৈঠক করেছেন তিনি। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, সেই বৈঠকে ছিলেন সুদীপ রায়বর্মণও। ভিনরাজ্যে দলকে ছড়িয়ে দিতে ত্রিপুরাকেই প্রথম টার্গেট করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, মুকুল রায়রা। বিপ্লব দেব শাসিত এই রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস অনেক আগেই প্রবেশ করেছিল। সেই কাজটির মাস্টারমাইন্ড ছিলেন মুকুল রায়ই। তাঁর হাতযশেই ত্রিপুরাতে তৃণমূলের ৬ জন বিধায়কও ছিল। কিন্তু মুকুল রায় বিজেপিতে যোগদান করার পরেই ওই ৬ বিধায়ক বিজেপিতে চলে যান। তারপর থেকেই ত্রিপুরা কার্যত তৃণমূলশূন্য হয়ে পড়েছিল। কিন্তু এবার ফের ‘খেলা’ শুরু হতে চলেছে ত্রিপুরায়।
ত্রিপুরায় মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের সঙ্গে সুদীপের সংঘাত সর্বজনবিদীত। গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, অন্তত ১৪ জন বিধায়ক নিয়ে বিজেপি ছাড়তে পারেন সুদীপ। আর সেই আশঙ্কাই বিজেপির অন্দরে ঝড় তুলে দিয়েছে। বড় সংখ্যক বিধায়ক নিয়ে দল ছাড়ার পর সুদীপের গন্তব্য যে তৃণমূলই হবে, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। কারণ দলবদলের আগে ওই বিজেপি বিধায়কদের কলকাতায় বা দিল্লীতে তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকের কথাও রয়েছে। আর বাংলার পর ত্রিপুরাতে বিপর্যয় আটকাতেই তাই এবার কোমর বেঁধে নেমেছে বিজেপি নেতৃত্ব। তবে বিজেপির ওপর চাপ বাড়াতে এখন থেকেই মাঠে নেমে পড়েছেন অভিষেক বন্দোপাধ্যায়।