চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে বিরোধী জোটের সলতে পাঁকাতেই দিল্লী সফরে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তৃণমূল নেত্রীর এই দিল্লী সফর ঘিরে রীতিমতো উৎকণ্ঠায় ভুগছে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব। চলতি সপ্তাহেই মমতার দিল্লী যাওয়ার কথা। সংসদ চলাকালীন সেখানে মোদী-মমতার প্রস্তাবিত বৈঠক ঘিরে রীতিমতো টেনশনে রয়েছেন এ রাজ্যের বিজেপি নেতারা। কারণ, কৃষি আইন, পেগাসাস, করোনা-সহ একাধিক ইস্যুতে সংসদের উভয়কক্ষে এই মুহূর্তে চাপে রয়েছে মোদী সরকার। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রের ওপর চাপ বাড়াতে এখন সরাসরি তৃণমূলের পালে হাওয়া জোগাচ্ছে কংগ্রেসও।
প্রসঙ্গত, রাজ্যের বিজেপি নেতাদের একাংশের আশঙ্কা, দিল্লীতে মমতার প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরম মনোভাব দেখালে বঙ্গ রাজনীতিতে গেরুয়া পার্টির সঙ্কট আরও বাড়বে। এ প্রসঙ্গে দলের রাজ্য কমিটির এক নেতা বলেন, ভোট পরবর্তী সময়ে তৃণমূলের রাজনৈতিক হিংসা নিয়ে আমরা বারবার সরব হয়েছি। কিন্তু এখনও নিচুতলায় কর্মী-সমর্থকরা আক্রান্ত হচ্ছেন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও আদালত গালভরা কিছু নির্দেশ কিংবা সুপারিশ করলেও তাতে কাজের কাজ হচ্ছে না। বাস্তব হল, ভোটের পর বিজেপির সংগঠন আগের তুলনায় দুর্বল হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, কর্মী-সমর্থকদের ধরে রাখাই এখন আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ, অকপট স্বীকারোক্তি ওই বিজেপি নেতার।
তিনি বলেন, বিধানসভা ভোটের আগে সূর্যকান্ত মিশ্র-অধীর চৌধুরীরা বিজেপি-তৃণমূলের আঁতাতের অভিযোগ তুলেছিলেন। এখন দেখছি, কংগ্রেস উল্টে তৃণমূলকে পাশে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। স্বভাবতই রাজ্য তথা জাতীয় পর্যায়ে জোড়াফুল শিবিরের গুরুত্ব অনেকটাই বেড়েছে। ওই নেতা মনে করেন, সংসদের ভিতরে একাধিক ইস্যুতে শাসকপক্ষ মমতার সহযোগিতা চাইতে পারে। তারপর ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচন। সেই প্রেক্ষিতে মমতার কাছে সহযোগিতা চাইতেই পারেন মোদী। সেই অঙ্কই ভাবাচ্ছে বিজেপির রাজ্য নেতাদের। কারণ, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ভুলে ভরা রণকৌশলের কারণেই বিধানসভায় রীতিমতো ভরাডুবি হয়েছে বিজেপির।
রাজ্য নেতাদের একটা বড় অংশ রীতিমতো ক্ষেপে রয়েছেন দিল্লীর নেতাদের ওপর। কারণ ভোট মিটে যেতেই বাংলা থেকে কার্যত পাততাড়ি গুটিয়েছেন তাঁরা। ভোট পরবর্তী সমস্ত ঝামেলা রাজ্য নেতাদেরই পোহাতে হচ্ছে। সেই সময় মমতার সঙ্গে মোদীর এই বৈঠক বিজেপির রাজ্য নেতারা ভালোভাবে নিচ্ছেন না। আড়ালে অনেকেই বলছেন, মোদী সামান্য আলগা দিলে মমতা বাংলায় গোটা বিজেপিকে কার্যত গ্রাস করে নেবেন। সেক্ষেত্রে তিল তিল করে গড়ে তোলা পার্টির ভিতটাই নড়ে যাবে। সবমিলিয়ে, জাতীয় রাজনীতির এহেন আবহে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক ওয়াকিবহাল মহলের আগ্রহ বাড়িয়েছে।