এই তো কিছু মাস আগের কথা। তখন সদ্য দেশে আছড়ে পড়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। আর তার জেরে দিকে দিকে চলছে অক্সিজেন এবং হাসপাতালের বেডের জন্য হাহাকার। দেশের একাধিক রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলেই শ্বাসবায়ু জন্য হাহাকার দেখা গিয়েছিল। তবে মঙ্গলবার কেন্দ্রের তরফে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতী পারভিন জানিয়ে দিয়েছেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে অক্সিজেনের অভাবে কোনও মৃত্যুর খবর তাদের কাছে নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এহেন মন্তব্যকে ঘিরে শুরু হয়েছে সমালোচনা। দিল্লীর স্বাস্থ্যমন্ত্রী থেকে শিব সেনা সাংসদ সঞ্জয় রাউত, বিরোধীরা তোপ দাগতে শুরু করেছেন কেন্দ্রকে। বিরোধিতায় সরব কংগ্রেসও।
গতকাল রাজ্যসভায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সঙ্কট নিয়ে ওঠা প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিল কেন্দ্র। প্রশ্ন তোলা হয়েছিল, করোনায় আক্রান্তরা অক্সিজেনের অভাবে রাস্তায় পড়ে মারা গিয়েছেন কি না। এই প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতী পারভিন পাওয়ার লিখিতে ভাবে জানান, অক্সিজেনের অভাবে কারও মৃত্যু হয়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এমন মন্তব্যের জবাবে দিল্লীর স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘ওরা হয়তো এটাও বলতে পারে আদৌ অতিমারী বলেই কিছু নেই। যদি অক্সিজেনের অভাবে কোনও মৃত্যু নাই হয়ে থাকে তাহলে হাসপাতালগুলি কেন দিল্লী হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল। প্রতিদিন তারা বেপরোয়া হয়ে আর্জি জানাচ্ছিল।’
প্রসঙ্গত, দেশের বহু রাজ্যেই অক্সিজেনের ঘাটতি ও কালোবাজারির অভিযোগ জানিয়ে বহু রোগীর পরিবারও আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল। সেই সময় দিল্লীতে একটি অডিট কমিটি তৈরি হয়েছিল বলেও জানান সত্যেন্দ্র। তিনি দাবি করেন, সেই কমিটির কাছে যা তথ্য রয়েছে তা অনায়াসেই দেওয়া যায়। কিন্তু লেফটেন্যান্ট গভর্নর জানিয়ে দিয়েছিলেন, কোনও তথ্যের প্রয়োজন নেই। কেন্দ্র নিজেদের মতো প্যানেল তৈরি করে নিয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে কংগ্রেসের তরফেও দাবি করা হয়েছে, ভারতী পারভিনের বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিশ আনা হবে।
কংগ্রেসের অভিযোগ, অক্সিজেন নিয়ে দেশে রোগী মৃত্যুর পরিসংখ্যান নিয়ে সংসদকে মিথ্যে বলেছেন মন্ত্রী। ভারতী পারভিনের বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিশ আনা হবে বলে জানিয়ে কংগ্রেসের রাজ্যসভার সদস্য কেসি বেণুগোপাল বলেন, ‘এই সরকার অন্ধ এবং নির্লিপ্ত। অক্সিজেনের অভাবের কারণে কত মৃত্যু হয়েছে, তা সাধারণ মানুষই দেখেছে।’ এদিকে প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীও এই বিষয়ে টুইট করেন। তিনি লেখেন, ‘শুধুমাত্র অক্সিজেনের অভাব নয়, সংবেদনশীলতা এবং সত্যের অভাব সেদিনও ছিল এবং আজও আছে।’
অন্যদিকে, বুধবার শিবসেনা সাংসদ সঞ্জয় রাউত রীতিমতো বিস্ময় প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রের ‘অক্সিজেন’ মন্তব্যে। তাঁর কথায়, ‘আমি বাকরুদ্ধ। যে সব পরিবারের সদস্যরা অক্সিজেনের অভাবে হওয়া মৃত্যুতে তাঁদের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, এমন কথা শুনে তাঁদের কেমন লাগবে? এই সব পরিবারগুলির উচিত সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করা।’ কেবল রাজনীতিবিদরাই নয়, মুখ খুলেছেন ভুক্তভোগীরাও। দিল্লীর তরুণ গৌরব গেরা, যিনি বাবা-মা দু’জনকেই হারিয়েছেন তিনি জানিয়েছেন, ‘সংসদে সরকারের এমন বিবৃতি শুনে খুব দুঃখ পেয়েছি। আমার বাবা সুস্থই ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁকে আমি হারাই। ডাক্তাররা জানিয়েছিলেন, অক্সিজেনের ঘাটতিই কারণ।’