সিবিআই নিয়ে ল্যাজেগোবরে অবস্থা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। বস্তুত পুজোর আগে থেকেই এক প্রকার গ্যাং ওয়ার শুরু হয়ে গিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সিতে। তা সামাল দিতে গিয়ে এখন একেবারে ঘেঁটে ‘ঘ’ অবস্থা মোদী সরকারের। যেভাবে সিবিআইয়ের শীর্ষ অফিসারেরা কাদা ছোঁড়াছুড়িতে নেমেছেন, তাতে অনেক রাঘববোয়ালের নামই প্রকাশ্যে আসতে পারে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
অবশ্য সেই কাজ শুরুও হয়ে গেছে। তদন্ত প্রভাবিত করতে কয়লা ও খনি মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী হরিভাই পার্থিভাই চৌধুরির বিরুদ্ধে ‘কয়েক কোটি টাকা’ ঘুষ নেবার অভিযোগ তুলেছেন সিবিআই-এর ডিআইজি মনীশ কুমার সিনহা। এমনকি সুপ্রিম কোর্টের কাছে ক্যাবিনেট সচিব পি কে সিন্হা, আইন মন্ত্রকের সচিব সুরেশ চন্দ্র, মুখ্য ভিজিল্যান্স কমিশনার কে ভি চৌধরির দিকেও অভিযোগের আঙুল তুলেছেন মনীশ। তাঁর অভিযোগ, এরা সকলে মিলে মোদী-শাহের আস্থাভাজন অফিসার রাকশে আস্থানার বিরুদ্ধে তদন্ত ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। এমনকি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালও এই মামলায় হস্তক্ষেপ করেছিলেন বলে অভিযোগ মনীশের।
কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকার বিরোধীদের শায়েস্তা করতে যে সিবিআই, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরের মতো তদন্ত এজেন্সিগুলিকে ব্যবহার করছে, সেই অভিযোগ অনেক আগেই করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়রা। কদিন আগে পর্যন্ত কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন জোট এনডিএ-র শরিক ছিলেন তেলুগু দেশম নেতা তথা অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডু। এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে এসে এখন তাঁরও অভিযোগ তাই।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, কেন্দ্রীয় এই এজেন্সিকে রাজনৈতিক ভাবে অপব্যবহারের তত্ত্ব এখন মেনে নিয়েছেন খোদ সিবিআই-এর প্রাক্তন ডিরেক্টর অলোক বর্মা। কেন্দ্রীয় ভিজিলেন্স কমিশনের কাছে জবানবন্দিতে সিবিআই ডিরেক্টর জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় এই তদন্ত এজেন্সি এখন কার্যত রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রেও সামিল। রাকেশ আস্থানা, প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের এক কর্তা এবং বিহারের বিজেপি নেতা তথা উপ মুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদী মিলে আলোচনা করে আইআরসিটি মামলায় লালু প্রসাদের বিরুদ্ধে মামলা সাজিয়েছেন।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, সব মিলিয়ে কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রীও যা সামাল দিতে পারছেন না। সুপ্রিম কোর্ট কিংবা ভিজিল্যান্স কমিশনের কাছে কেন্দ্রের মোদী সরকারের বিরুদ্ধে অলোক বর্মা, মনীশ সিনহাদের মন্তব্য বিরোধীদের আনা অভিযোগেই সীলমোহর দিচ্ছে। যাতে লোকসভা ভোটের মুখে নতুন করে প্যাঁচে পড়েছে মোদী সরকার।