দেশজুড়ে পেট্রোপণ্যের ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এবার হুগলীর চুঁচুড়ায় গোরুর গলায় পোস্টার ঝুলিয়ে অভিনব বিক্ষোভ করল তৃণমূল। পোস্টারে নরেন্দ্র মোদী সরকারের কাছে রাজ্যের শাসকদলের প্রশ্ন— “পরিবহণ হিসাবে ভবিষ্যতে গরুই কি একমাত্র ভরসা? হুগলীর চুঁচু়ড়ার মতোই দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট এবং পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের কুলটিতে প্রতিবাদে শামিল হন শাসকদলের কর্মী-সমর্থকেরা। বিক্ষোভ হয়েছে উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর, পূর্ব বর্ধমানের ভাতার এবং বর্ধমান শহরেও। শনিবার সকাল থেকেই চুঁচুড়ার তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদারের নেতৃত্বে চুঁচুড়া ঘড়ির মোড়ে অবস্থান বিক্ষোভ করছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। বিকেল ৪টে পর্যন্ত এই কর্মসূচী চলবে। অসিতের মন্তব্য, “প্রতিদিন তেলের দাম বাড়ছে। জ্বালানির দাম বাড়লে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামও যে বাড়ে, এটা বিলক্ষণ জানেন নরেন্দ্র মোদী। তাই মানুষকে মেরে ফেলতে চাইছেন। এ ভাবে টুক টুক করে দাম না বাড়িয়ে পেট্রল ঢেলে মানুষকে জ্বালিয়ে দিতে পারেন।”
অভিনব প্রতিবাদ করেছেন পূর্ব বর্ধমানের ভাতারের বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারীও। দেশ জুড়ে পেট্রোল, ডিজেল-সহ রান্নার গ্যাস, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে ভাতারে একটি গরুর গাড়িতে সওয়ার হয়ে বিক্ষোভ জানান মানগোবিন্দ। প্রসঙ্গত, দেশ জুড়ে প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে পেট্রল-ডিজেলের দাম। শনিবার হুগলীতে পেট্রলের দাম লিটার প্রতি ৩৯ পয়সা বেড়ে হয়েছে ১০১.৪১ টাকা। ডিজেলের দাম ৩২ পয়সা বেড়ে হয়েছে ৯৩.৩৫ টাকা। এ নিয়ে শাসক-বিরোধীর তরজা চলছে। বিজেপি রাজ্য কমিটির সদস্য স্বপন পাল বলেন, “রাজ্য সরকার বেশি সেস নেওয়ায় তেলের দাম বাড়ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দামের উপর বাজারদর ওঠানামা করে। এটা জেনেও এ সব নাটক করছে। ভোজ্য তেল, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম যে ভাবে বাড়ছে, সেটা নিয়ে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করুক তৃণমূল।”
উল্লেখ্য, শনিবার বিক্ষোভের মাঝেই অবস্থানমঞ্চে তৃণমূলে যোগ দিলেন হুগলী জেলার বিজেপির মিডিয়া ইনচার্জ এবং শ্রমিক সংগঠনের নেতা সপ্তর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধায়ক অসিত মজুমদারের হাত থেকে তৃণমূলের পতাকা তুলে নেন তিনি। অসিত বলেন, “সপ্তর্ষি আমাদের পুরনো ছেলে। দীর্ঘদিন বিজেপি করেছে। ফের ঘরের ছেলে ঘরে ফিরল। ওকে চুঁচুড়ায় দায়িত্ব দিয়ে কাজ করাব।” তবে এই দলবদল নিয়েও শাসক-বিরোধীর তরজা শোনা গিয়েছে। তবে স্বপনের কটাক্ষ, “সমুদ্র থেকে এক ঘটি জল তুলে নিলে জল কমে যায় না। বিশ্বের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিজেপি থেকে কেউ গেলেও দলের কোনও ক্ষতি হবে না।” চুঁচুড়ার মতোই কুলটিতে যুব তৃণমূলের তরফে অভিনব বিক্ষোভও হয়েছে। বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমান্তবর্তী এলাকায় নিজেদের জামা পুড়িয়ে, রান্না করে বিক্ষোভে শামিল হন দলের রাজ্য নেতা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়-সহ কর্মীরা।
এদিন চুঁচুড়া এবং কুলটি ছাড়াও বালুরঘাটের ব্যাসস্ট্যান্ড এলাকায় একই ইস্যুতে তৃণমূলের বিক্ষোভ হয়। এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা কো-অর্ডিনেটর সুভাষ চাকি, বালুরঘাট শহর তৃণমূল সভাপতি শ্যামল লাহা, দলের যুবনেতা মহেশ পারেখ-সহ অন্য নেতারা। পাশাপাশি, যুব তৃণমূলের পক্ষে শহরের বিভিন্ন পেট্রল পাম্পে প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়। রবিবারও এই কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছে তৃণমূল। লাগাতার পেট্রল, ডিজেল ও রান্নার গ্যাসের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে শনিবার দিন ভর তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের বিক্ষোভ চলে দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও। জেলার প্রায় অধিকাংশ বিধানসভা কেন্দ্রেই তৃণমূলের বিধায়ক ও ব্লক সভাপতিদের নেতৃত্বে চলে এই বিক্ষোভ। এ ছাড়া পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম জেলাতে শনিবার দিনভর পেট্রলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়ে অবস্থান বিক্ষোভ করে তৃণমূল।