প্রতিশ্রুতিমতোই যশ-এ ক্ষতিগ্রস্তদের দুয়ারে পৌঁছে গেল ৩১৮ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ। মাত্র সাত দিনের মধ্যেই। ক্ষতিপূরণে কেন্দ্রীয় সাহায্য অনিশ্চয়তার আঁধারেই। কিন্তু, তৎপর রাজ্য সরকার । ক্ষতিগ্রস্তদের আবেদন খতিয়ে দেখে দ্রুত আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি পূরণে নেমে পড়েছে নবান্ন। একসপ্তাহের মধ্যেই লক্ষাধিক মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি চলে গেল ক্ষতিপূরণের টাকা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত ‘দুয়ারে ত্রাণ’ প্রকল্পের সফল, এমনই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
উল্লেখ্য, বছর ঘূর্ণিঝড় আম্ফান নিয়ে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ করেছিল বিরোধীরা। যা নিয়ে রাজ্য-রাজনীতি তোলপাড় হয়। তাই এবার যশ ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার পর ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইমতো ব্লকে ব্লকে আবেদন গ্রহণ করার পর তা খতিয়ে দেখা হয়। রাজ্যের আটটি জেলায় ৩ লক্ষ ৮১ হাজার আবেদন জমা পড়ে। এরপর ৩০ জুন পর্যন্ত ওইসব আবেদনপত্রের যাচাই প্রক্রিয়া শুরু হয়। যে-সমস্ত কৃষক ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন করেছেন, তাঁদের নাম, জমি সংক্রান্ত তথ্য কৃষকবন্ধু পোর্টালে মিলিয়ে দেখা হয়। কিন্তু দেখা যায়, অনেক আবেদনের বাস্তবতা নেই। সেই সংখ্যা দাঁড়ায় দু’লক্ষের বেশি। তা সঙ্গে সঙ্গে বাতিল করা হয়।
প্রসঙ্গত, নবান্ন থেকে স্পষ্টভাবে জেলশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত কোনও মানুষ যেন ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত না হয়। কিন্তু কোনও অভিযোগ যেন না ওঠে। তাই ঘূর্ণিঝড় হওয়ার পরই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিডিও এবং অফিসাররা এলাকায় ঘুরে ঘুরে ছবি তুলে একটি তালিকা করে রাখেন, যা দেখে মিলিয়ে আবেদনকারীকে বৈধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বাড়িঘর ভেঙে পড়া, কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, মাছচাষ নষ্ট হয়ে যাওয়া প্রভৃতি বিষয়ে সরকারের বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের নির্ধারিত তালিকা অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়।
গত ১ থেকে ৮ই জুলাইয়ের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ আবেদনকারীর কাছে তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফারের মাধ্যমে টাকা চলে গিয়েছে। কথা দিয়ে কথা রাখলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ কেন্দ্রীয় সরকার মাত্র ৩০০ কোটি টাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েই দায় সেরেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের কাছে ক্ষতিপূরণের হিসেব দিয়ে টাকা চেয়েও পায়নি রাজ্য সরকার। কেন্দ্রের মুখাপেক্ষী না থেকে রাজ্যের নিজস্ব তহবিল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে মাত্র সাতদিনেই ৩১৮ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া হল। এটিকে সরকারের একটি উল্লেখযোগ্য মানবিক প্রয়াস বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।