পোলভল্টে এক-দু’বার নয়। মোট ৩৫ বার নিজের রেকর্ড নিজে ভেঙেছিলেন তিনি। তবে বিবৃতির ডিগবাজিতে যে দ্রতগতিতে সৌমিত্র খাঁ এগোচ্ছেন, তাতে অচিরেই ভাঙতে পারে বিশ্ববিখ্যাত পোলভল্টার সের্গেই বুবকার ডিগবাজির রেকর্ড।
প্রসঙ্গত, ইউক্রেনের পোলভল্টার বুবকার জগৎজোড়া খ্যাতি নিজের রেকর্ড নিজে ভাঙার জন্য। ৩৫ বার রেকর্ড ভাঙার রেকর্ড গড়েছেন তিনি। অতবার না হলেও রাজনৈতিক ডিগবাজিতে মুন্সিয়ানার ছাপ রেখেছেন বিষ্ণুপুরের সাংসদ। গত বছর সাংবাদিক বৈঠক ডেকে তৃণমূলে চলে যাওয়া স্ত্রীকে বিবাহের বন্ধন থেকে বিচ্ছিন্ন করেছিলেন। সে ছিল ২০২০ সালে সম্ভবত সবচেয়ে চমকপ্রদ ঘটনা। সাংবাদিক বৈঠকে বিবাহবিচ্ছেদ। কিন্তু সেই চমককেও পিছনে ফেলে দিচ্ছে ঘটা করে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর সৌমিত্রের ডিগবাজি।
‘বাংলার বুবকা’ ডিগবাজির সর্বশেষ নমুনাটি দেখিয়েছেন বুধবার। গতকাল দুপুরে ফেসবুকে পোস্ট করে তিনি বিজেপি যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার ঘোষণা করেন। তার একটু পরে ফেসবুকে ‘লাইভ’ করে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কঠোর নিন্দা করেন। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই ফের ডিগবাজি। সংবাদমাধ্যমে জানিয়ে দেন, তিনি পদত্যাগ করছেন না।
তিনি এমনও দাবি করেন, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অনুরোধেই তাঁর সুরবদল। যদিও রাজ্য বিজেপি নেতারা বলছেন, ‘ওঁকে কেউ চাপ দেয়নি। সৌমিত্র নিজেই চাপ দিতে চেয়েছিলেন। কাজ হবে না বুঝতে পেরে সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেন।’ রাজ্য সভাপতি দিলীপের কথায়, ‘ফেসবুকে ইস্তফা দেওয়া যায় না। তুলেও নেওয়া যায় না। এভাবে সংগঠন চলে না।’ একই কথা দিলীপ বলেছিলেন মাস আটেক আগেও।
২০২০ সালের ২৪ অক্টোবর এভাবেই যুব মোর্চার সভাপতি পদ ছেড়েছিলেন সৌমিত্র। দুর্গাষ্টমীর সকালে সৌমিত্র দলের পদাধিকারীদের নিয়ে তৈরি হোয়াটসগ্রুপে লিখেছিলেন, ‘শুভ মহাষ্টমী। সকলে ভাল থাকবেন। আপনাদের খুবই সহযোগিতা পেয়েছি। আমি চাই বিজেপি-কে সরকারে আনতেই হবে। তাই হয়ত আমার অনেক ভুল ছিল যাতে দলের ক্ষতি হচ্ছিল। তাই আমি ইস্তফা দেব আর সকলে ভাল থাকবেন। যুব মোর্চা জিন্দাবাদ, বিজেপি জিন্দাবাদ, মোদীজি জিন্দাবাদ।’
তবে সেদিন দুপুরেই ডিগবাজি খেয়ে তিনি লিখেছিলেন, ‘কোনও কমিটি চেঞ্জ (বদল) হচ্ছে না আর আমার তোমাদেরকে ছেড়ে থাকা সম্ভব নয়।তাই ফিরে এলাম।টিএমসি-কে হারানোর জন্য সব কিছু ত্যাগ করতে রাজি আছি। জয় শ্রী রাম, জয় মা দুর্গা, বিজেপি জিন্দাবাদ, মোদীজি জিন্দাবাদ।’ যদিও সেবার সৌমিত্রের তৈরি যুব মোর্চার প্রায় সব জেলা কমিটিই ভেঙে দিয়েছিলেন দিলীপ। অভিযোগ ছিল, সৌমিত্র সমান্তরাল সংগঠন বানাতে চাইছেন।
হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছাড়া এবং ঢোকা সংক্রান্ত ডিগবাজির রেকর্ডও আছে। জুন মাসেই সৌমিত্র বিজেপির একটি সাংগঠনিক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ত্যাগ করেন। ৫ জুন দিলীপের ডাকা বিষ্ণুপুরের সাংগঠনিক বৈঠকেও যোগ দেননি এলাকার সাংসদ। কলকাতায় ছিলেন। বলেছিলেন, ‘লকডাউন চলছে। মিটিং-মিছিল বন্ধ আছে। রাজ্য সরকারের সেই লকডাউনের সিদ্ধান্তকে মান্যতা দিয়েই আমি বৈঠকে না থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
তবে এখানেই শেষ নয়। বিধানসভা ভোটের আগে ‘চাকরির প্রতিশ্রুতি’ দেওয়ার কার্ড বিলি করেও প্রত্যাহার করেছেন। ডিগবাজি! ত্রিশূল বিলি করার কর্মসূচী ঘোষণা করে দলের সমর্থন না পেয়ে কর্মসূচী বাতিল করেছেন। সেখানেও ডিগবাজি! আবার গত জুন মাসে আবার ন্যাড়া হওয়ার ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু হননি। রাজ্য রাজনীতি কি ভবিষ্যতেও এভাবেই ‘বাংলার বুবকা’-র ডিগবাজিতে নিজস্ব রেকর্ডভঙ্গের সাক্ষী থাকবে, সেটাই এখন দেখার।