করোনা পরিস্থিতিতে খাদের কিনারে পৌঁছে যাওয়া অর্থনীতিকে বাঁচাতে ঋণ বিলিকেই দাওয়াই হিসাবে বেছে নিয়েছে মোদী সরকার। শুধু তা-ই নয়, ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারি শিল্প, ব্যবসা এবং করোনা বিধ্বস্ত ক্ষেত্রগুলিতে জোগানো ঋণে ‘গ্যারান্টর’ তারাই। কিন্তু ২০২৪ সালে লোকসভা ভোটের মুখে এই ঋণ গ্যারান্টি প্রকল্পই কেন্দ্রের ঘুম কেড়ে নিতে পারে বলে শঙ্কিত অর্থ মন্ত্রকের শীর্ষ কর্তাদের একাংশ। তাঁদের মতে, এই ‘লুকোনো’ ধারের বোঝা দু’তিন বছর পরে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক তথা কেন্দ্রীয় সরকারের গলার ফাঁস হয়ে উঠতে পারে। যদিও তা মানতে নারাজ কেন্দ্রের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কে ভি সুব্রহ্মণ্যন।
গত বছর কোভিডের প্রথম ঢেউ আছড়ে পড়ার পরেই অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ ৩ লক্ষ কোটি টাকার সহজ ঋণের প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন। এর মধ্যে ২.৭ লক্ষ কোটি টাকার সরকারি গ্যারান্টিযুক্ত ঋণ ইতিমধ্যেই বিলি হয়ে গিয়েছে। এর পরে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে হোঁচট খাওয়া বিভিন্ন ক্ষেত্রের জন্য সোমবার আরও ১.১ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ-গ্যারান্টি প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আগের প্রকল্পের বহরও বাড়িয়ে ৪.৫ লক্ষ কোটি টাকা করেছেন নির্মলা। ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থার মাধ্যমেও এই গ্যারান্টিযুক্ত ঋণ বিলি হবে।
এই ঋণ-গ্যারান্টি প্রকল্পে কোভিড ও লকডাউনের জেরে ধুঁকতে থাকা শিল্প, ব্যবসাকে ঋণ দেবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক। কিন্তু ঋণগ্রহীতারা ঋণশোধ না করলে, ধারের টাকা শোধ করে দেবে কেন্দ্রই। চিন্তা সেখানেই। অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘আমরা জানি, এই সমস্ত ঋণের একটা বড় অংশ শোধ হবে না। তার দায় সরকারকেই নিতে হবে। ফলে দু’তিন বছরের মধ্যে যখন ঋণ শোধের সময় আসবে, তখন এক ধাক্কায় ব্যাঙ্কগুলির অনাদায়ি ঋণের বোঝা বেড়ে যাবে। আর ধার শোধের দায় নিতে গিয়ে রাজকোষের ওপরেও চাপ বাড়বে।’ তাঁর মতে, আপাতত এই ঋণ কার্পেটের নীচে ধামাচাপা দেওয়া থাকছে ঠিকই। কিন্তু আগামী দিনে তা মাথাব্যথার কারণ হবে।
গত সপ্তাহেই বিশ্ব ব্যাঙ্ক ভারত-সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিকে এই লুকোনো ঋণ নিয়ে সতর্ক করেছে। তাদের মতে, এই ঋণ আর্থিক সঙ্কটের কারণ হতে পারে। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্টও বলছে, ব্যাঙ্কের অনাদায়ি ঋণ ও অনুৎপাদক সম্পদ (এনপিএ) ফের মাথাচাড়া দিতে পারে। ‘লুকোনো ঋণ’-এর সমস্যা মানছেন সুব্রহ্মণ্যনও। তাঁর মতে, এখন যে ঋণ বিলি হচ্ছে, তা দু’তিন বছর পরে অনেকেই হয়তো শোধ করতে পারবেন না। ফলে তা সরকারকে শোধ করতে হবে।