তরুণ বয়সে পথভ্রষ্ট হয়ে নকশাল আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ভ্রম যখন ভাঙে তখন তাঁর মনে হয়, ‘সামাজিক সাম্যের লড়াইটা জরুরি।’ তখন থেকেই বন্দুক ছেড়ে রিকশা হাতে তুলে নিয়েছিলেন তিনি। দলিত অধিকার রক্ষায় লিখে ফেলেছেন একাধিক বইও। তাঁর লড়াকু ভাবমূর্তি দেখেই বলাগড়ে তাঁকে তৃণমূল প্রার্থী করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নাম ঘোষণা করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘মাটির মানুষ। রান্না করেন, রিকশা টানেন, সাহিত্য চর্চাও করেন।’ ভোটে জিতে বিধায়ক হয়ে নেত্রীর মান রেখেছেন মনোরঞ্জন ব্যাপারী। তবে বিধায়ক হয়ে অভাবী মানুষের দুর্দশা আরও বেশি করে কষ্ট দিচ্ছে তাঁকে। নিজের ফেসবুক ওয়ালে সেই কথাই সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন তৃণমূল বিধায়ক। তিনি জানিয়েছেন, তিনি হাঁপিয়ে উঠেছেন। মানুষের দুঃখ-কষ্ট দেখে, তাঁদের দুর্ভাগ্যের ভাগীদার হয়ে কেঁদে উঠেছে তাঁর হৃদয়।
এদিন নিজের ফেসবুক পোস্টে মনোরঞ্জন ব্যাপারী লিখেছেন, ‘মনে হচ্ছে রাজনীতিতে এসে আমি বোধহয় ঠিক করিনি। যখন দূরে ছিলাম, যখন তেমন ভাবে কিছু জানতাম না, খানিক সুখে ছিলাম। এখন সব দেখে জেনে, সরাসরি যুক্ত হয়ে আর কোনো রাতেই ভাল মতো ঘুমাতে পারছি না। কী এক কষ্টে মাঝরাতে উঠে পায়চারি করতে বাধ্য হই।’ প্রসঙ্গত, নতুন বিধায়কের কাছে অনেক প্রত্যাশা বলাগড়ের মানুষের। সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই নাকি তাঁরা এসে বিধায়কের দরজায় দাঁড়িয়ে পড়ছেন। সেই ভিড় আর রাত এগারোটা-বারোটার আগে কম হয় না। কিছুদিন আগে একটি টোটো কিনে ফেসবুকেই মনোরঞ্জন জানিয়েছিলেন, তাঁর একটা নতুন বাহন হয়েছে। এবার থেকে তাতে চড়েই লোকের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাবেন তিনি।
পৌঁছে যাওয়ার পাশে থাকার কথা তো দিয়েছেন, কিন্তু তা পালন করতে গিয়ে বলাগড়ের বিধায়ক রাতদিন এক করে দিচ্ছেন। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, আমাকে ঘিরে সবার অনেক আশা-প্রত্যাশা। যেন আমার কাছে কোনও জাদুকাঠি আছে যা দিয়ে তাদের সব সমস্যার সমাধান করে ফেলতে পারি। যে বেকার, সে ভাবছে চাইলেই আমি তাকে একটা চাকরি দিয়ে দিতে পারি। যার ভাঙা ঘর তাকে দিতে পারি একটা মাথা গোঁজার সুন্দর আবাস। যে অসুস্থ তাকে দিতে পারি সুচিকিৎসা। কিন্তু বিধায়কের কথায়, ‘আমি অতি তুচ্ছ নগন্য একজন মানুষ। আমি যদি পারতাম তাহলে সবার সব চোখের জল সব হাহাকার, না পাওয়ার বেদনা এক নিমিষে মুছে দিতাম। ওরা আমাকে ঈশ্বর ভাবছে কিন্তু আমি যে সেই খড় মাটি রঙের একটা মূর্তি ছাড়া আর কিছুই নই।…ওদের কাতর কান্না, হাহাকার আমার বুকে যেন ধারালো চাকুর মতো চিরে চিরে বসে যায়। রক্তক্ষরণ ঘটায়।’