কিছুদিন আগেই সেল নিয়ে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের সঙ্গে পত্রযুদ্ধ বেঁধেছিল কেন্দ্রীয় ইস্পাতমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের। বিতর্কের বিষয় ছিল কলকাতা থেকে সেলের কাঁচামাল সরবরাহকারী বিভাগ তুলে ফেলা। দফতর স্থানান্তরের এহেন ঘোষণায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ছায়া দেখেছিলেন অমিত। যে ছায়া এবার আরও কিছুটা চওড়া হল মোদী সরকারের সাম্প্রতিকতম তৎপরতায়। সেলের কাঁচামাল সরবরাহকারী বিভাগ বা আরএমডি-র পর এবার কেন্দ্রের নজরে অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডের সদর দফতর। স্ট্র্যান্ড রোডের ঐতিহাসিক ‘আয়ুধ ভবনে’র কারবার আপাতত গুটিয়ে ফেলতে চাইছে মোদী সরকার। যার জেরে একদিকে বাংলার প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনার স্বর যেমন জোরাল হচ্ছে, তেমনই দেশের প্রতিরক্ষা শিল্পের ভবিষ্যৎ বেসরকারি হাতে চলে যাওয়ার সম্ভাবনাও তীব্র হয়ে দেখা দিল।
প্রসঙ্গত, দেশজুড়ে সেনা বাহিনীর অস্ত্র-গোলাবারুদ উৎপাদনের দায়িত্বে রয়েছে অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড। গোটা দেশে এই মুহূর্তে ৪১টি অস্ত্র কারখানা রয়েছে। তার মধ্যে বাংলায় আছে ৪টি। ইছাপুর, কাশীপুর, দমদম ও নাগেরবাজারে সেগুলি ছড়িয়ে রয়েছে। ৪১টি ফ্যাক্টরিই অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডই এতদিন পরিচালনা করে এসেছে। এই বোর্ডের সদর দফতর রয়েছে কলকাতায়, স্ট্র্যান্ড রোডে। কিন্তু মোদী সরকারের সাম্প্রতিক নীতি মেনে এবার থেকে এই অস্ত্র কারখানাগুলিকে বাণিজ্যিক দৃষ্টিতে চালানো হবে। বাড়বে বেসরকারি বিনিয়োগ। সেই প্রক্রিয়া মেনেই বোর্ডকে ৭টি নিগমে ভাঙার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর ফলে একদিকে যেমন হেডকোয়ার্টার কলকাতা থেকে উঠে যাচ্ছে, ঠিক তেমনই প্রস্তাবিত নয়া নিগমের একটির সদর দফতরও এই মহানগরীর জন্য বরাদ্দ হয়নি।
কেন্দ্রের তরফে এ বিষয়ে স্পষ্টভাবে কিছু জানানো না হলেও প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের নথি বলছে, দেশের বিভিন্ন রাজ্যে অস্ত্র সরঞ্জাম উৎপাদনের ধরন অনুযায়ী নতুন ৭টি দফতরকে সাজানো হবে৷ যেমন, উইপ্যান অ্যান্ড ইকুইপমেন্ট, ট্রুপ কমফোর্ট আইটেমের মতো সরঞ্জাম তৈরির দায়িত্ব যে কর্পোরেট নিগমকে দেওয়া হবে, তার দফতর বসবে উত্তরপ্রদেশের কানপুরে। একইভাবে অ্যানসিলিয়ারি বিভাগের কেন্দ্র গড়ে উঠবে নাগপুরে। সেনা যানবাহন নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত দফতর সাজানো হবে চেন্নাইয়ের আভেরিতে। এভাবে বাকি দফতরগুলি উত্তরাখণ্ড, পুনের মতো দেশের একাধিক শহরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ব্যতিক্রম একমাত্র বাংলা, কলকাতা।
করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই এভাবে হেডকোয়ার্টার গোটানোয় কর্মীমহলে অসন্তোষ জমেছে। প্রতিরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ ও অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি বিষয়কে ঢেলে সাজানোর নামে কর্পোরেট মালিকদের হাতে তুলে দেওয়ায় দেশের সুরক্ষা কতখানি নিশ্ছিদ্র থাকবে, সে বিষয়ে সন্দিহান কর্মী ও আধিকারিকদের অনেকেই। পাশাপাশি কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের জেরে কাজ হারানোর আশঙ্কায় ভুগছেন অনেক ঠিকাকর্মী। আবার চলতি কোভিডের তাঁদের অন্যত্র বদলির নোটিস নিয়ে চলে যেতে হতে পারে— এই দুশ্চিন্তায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থায়ী কর্মীদের একাংশ। অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডের কর্মী ইউনিয়নের পক্ষে আইএনটিইউসি ফেডারেশনের সুভাষ নাহা বলেন, কলকাতায় বোর্ডের সদর অফিসে স্থায়ী কর্মী আছেন প্রায় আটশো। এছাড়া শ-দুয়েক অস্থায়ী কর্মী আছেন। আমরা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।