দেশজুড়ে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছে মোদী সরকার। ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে ও কোভিড কার্ভ নিয়ন্ত্রণে রাখতে জরুরি ভিত্তিতে কী কী করা দরকার, এবার সে নিয়ে দীর্ঘ পরামর্শ দিলেন ল্যানসেটের ২১ জন বিশেষজ্ঞের প্যানেল। এই প্যানেলের রয়েছে ভারতের বিশিষ্ট হার্ট সার্জন ডাঃ দেবী শেঠি ও বায়োকনের প্রধান কিরণ মজুমদার শ। ভারতে কোভিডের সংক্রমণের শুরু হতেই গোটা দেশের মানুষকে এ ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন ডক্টর শেঠি। এ দেশে চিকিৎসা পরিষেবায় তাঁর সুনাম শুধু রয়েছে তা নয়, বহু লোকে তাঁর বক্তব্যকে গুরুত্ব দেন। ডাঃ শেঠি আগেও বলেছিলেন, করোনার ধাক্কা ভারত সামলে নেবে, শুধু সঠিক পরিকল্পনা ও পরিকাঠামো দরকার। নিয়ম মেনে করতে হবে টিকাকরণও। তার জন্য সঠিক রূপরেখা চাই। তিনি ও ল্যানসেটের ২১ জন বিশেষজ্ঞের প্যানেল আট দফার জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন।
কী কী জানানো হয়েছে সেই প্রস্তাবে, দেখে নেওয়া যাক :
১. প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবার সংগঠনকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। কারণ জেলা এবং রাজ্যস্তরে স্বাস্থ্যসেবার ও পরিকাঠামোর আকার ভিন্ন। সেই মোতাবেক পদ্ধতি অবলম্বন করা।
২. অ্যাম্বুলেন্স, অক্সিজেন, প্রয়োজনীয় ওষুধের মত প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা পণ্যের একটি নির্দিষ্ট মূল্য নির্ধারণ করা আবশ্যক। দেশজুড়ে যার দাম একই থাকবে। সমস্ত মানুষকে স্বাস্থ্য বীমা প্রকল্পের আওতায় আনা উচিত। যেমন বহু রাজ্যে তা শুরু হয়ে গিয়েছে।
৩. কোভিড-১৯ পর্যালোচনার ক্ষেত্রে প্রমাণভিত্তিক তথ্য সংগ্রহে জোর দিতে হবে। সেই নির্দেশ মেনেই কাজ করতে হবে জেলা ও রাজ্যের হাসপাতালগুলিকে। বাড়িতে থাকলে কীভাবে শুশ্রূষা করা যায়, হাসপাতালে কী কী ব্যবস্থা নিতে হবে আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে সুনির্দিষ্ট নির্দেশ থাকার প্রয়োজন।
৪. স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে উন্নত করতে প্রয়োজনে বেসরকারি ক্ষেত্রকেও কাজে লাগাতে হবে। মানবসম্পদকে ব্যবহার করতে হবে সঠিকভাবে। সকলকে পিপিই কিট প্রদান, মেডিকেল কেয়ার সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজও করতে হবে সরকারকেই।
৫. টিকা উপলব্ধ করতে হবে সকলের জন্য। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ভ্যাকসিন ডোজ যাতে সকলে পায় তা নিশ্চিত করতে হবে রাজ্য সরকারকেই। ভ্যাকসিনকে সম্পূর্ণ বেসরকারিহাতে ছেড়ে দেওয়া মঙ্গলজনক নয়।
৬. মুম্বইয়ের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। দেশে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কাজ করাটাই লক্ষ্য। নিম্ম স্তরের সিভিল সোসাইটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল সেখানে।
৭. আগামী সপ্তাহগুলিতে জেলায় সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ফের বাড়তে পারে। তাই আগাম সতর্কতা বাবদ প্রস্তুত থাকা উচিত। তবে কোভিড আক্রান্ত ও বাকি তথ্যর ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট মডেল মেনে পরিসংখ্যানে স্বচ্ছতা প্রয়োজন।
৮. জীবিকা নির্বাহ করতে গিয়ে করোনাকালে যারা প্রাণ হারিয়েছেন কিংবা চাকরি খুইয়েছেন তাঁদেরকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত সরকারের। বেশ কিছু রাজ্যে তা হয়েছে। অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে ও চাহিদা বৃদ্ধি করতে এই পদক্ষেপ প্রয়োজন।