একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় দাঁত ফোটাতে পারেনি গেরুয়া শিবির। ভরাডুবি হয়েছে তাদের। নানান সমালোচনায় বিদ্ধ হতে হয়েছে নেতৃত্বকে। উঠেছে বিভিন্ন অভিযোগ। ভোটের পরেও তা অব্যাহত। এবার হাতেনাতে তার প্রমাণ মিলল উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি শহরের ডাঙাপাড়া এলাকায়। সেখানে একটি বেসরকারি সংস্থা স্থানীয় নেতাজী মিউজিয়াম ভবনে অক্সিজেন পার্লার তৈরি করতে গিয়ে তীব্র বিক্ষোভের মুখে পড়ে তাদের সব সরঞ্জাম নিয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হল। তারপরেই অভিযোগ উঠেছে, ভোটে হেরে প্রতিশোধ নিতে এলাকার মানুষকে ভুয়ো তথ্য দিয়ে প্ররোচিত করে এই অক্সিজেন পার্লার তৈরা না করার কাজটি করিয়েছে ওই এলাকারই বিজেপির নেতারা। ঘটনার সঙ্গে জলপাইগুড়ি শহরের আরও বেশ কিছু নেতা জড়িয়ে আছেন বলেও উঠেছে অভিযোগ।
উল্লেখ্যহ করোনাকালে গতবছর থেকেই জলপাইগুড়ি শহরের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘গ্রিন জলপাইগুড়ি’ জনকল্যাণমূলক কাজ করে চলেছে। কোভিড আক্রান্ত মানুষকে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া, হাসপাতাল থেকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া, কোভিড আক্রান্তদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, লকডাউনে সাধারন মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিলি করার মতো বেশ কিছু কাজ এই সংস্থাটি করে চলেছে এখনও। স্থানীয় প্রশাসন থেকে সংবাদমাধ্যমও তাঁদের এই কাজকে কুর্নিশ জানিয়েছে। এমনকী এই সংস্থার কিছু সদস্য চলতি মাসেই রাস্তায় প্রতিবাদ বিক্ষোভ সহ ভিক্ষা করতে বসেছিল তাঁদের সদস্যদের বিনামূল্যে ভ্যাক্সিন দেওয়ার দাবি তুলে। কিন্তু সেই বিষয়টি ভালো ভাবে নেননি জলপাইগুড়ির বিজেপি সাংসদ। এখন অভিযোগ উঠেছে, তিনি ও জলপাইগুড়ি জেলা বিজেপি নেতৃত্ব এই ‘গ্রিন জলপাইগুড়ি সংস্থার সব কাজ বন্ধ করে দিতে চাইছেন’। এদিনের ঘটনা সেই চক্রান্তেরই অঙ্গ বলে অনেকেই দাবি করেছেন।
সূত্র অনুযায়ী খবর, জলপাইগুড়ি ডাঙাপাড়া এলাকায় থাকা নেতাজী মিউজিয়াম ভবনে জেলা প্রশাসনের অনুমতি স্বাপেক্ষে একটি অক্সিজেন পার্লার খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল গ্রিন জলপাইগুড়ি। সেই অনুমতি হিসাবে সংস্থাটি জেলা স্বাস্থ্য দফররের সঙ্গে একটি মউ চুক্তিও সই করেছে তারা। কিন্তু প্রথম থেকেই জেলা বিজেপি নেতৃত্ব বিষয়টি ভালো ভাবে নেয়নি। গতকাল বিকালেই নেতাজী মিউজিয়াম ভবনে অক্সিজেন পার্লার চালু করার জন্য বেড, অক্সিজেন সিলিন্ডার, হুইল চেয়ার ইত্যাদি নিয়ে পৌঁছে যায় সংস্থার কর্মীরা। কিন্তু এর মধ্যে এলাকায় বিজেপি কর্মীরা রটিয়ে দেয় যে, সেখানে কোভিড হাসপাতাল তৈরী করা হবে। এরপর এই খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় বাসিন্দারা এদিন ওই ভবনের সামনে জড়ো হয়ে গ্রিন জলপাইগুড়ি সংস্থার কাজে বাধা দিতে শুরু করে। এমনকী সংস্থার সদস্যদের মারধর করা ছাড়াও তাঁদের প্রাণে মারার হুমকিও দেওয়া হয়। এদিন থেকেই কার্যত ওই অক্সিজেন পার্লার চালু হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই বিক্ষোভের জেরে সেই কাজ তো বন্ধ হয়েই গেল, গ্রীন জলপাইগুড়ি সংস্থার তরফেও এদিন সব সামগ্রী নিয়ে ফেরত চলে আসা হয়েছে বলে জানিয়েছেন, গ্রিন জলপাইগুড়ির সাধারণ সম্পাদক অঙ্কুর দাস।