নাগরিকপঞ্জী তালিকা থেকে বাদ খোদ এনআরসি কর্মীরাই। এমন অভিযোগ তুললেন আসামের এনআরসি কর্মীরা।
আসামের কাছাড় পেলা পরিষদের অফিসের ১০ থেকে ১২ জন এনআরসি কর্মীর নাওয়া-খাওয়ার সময় নেই এখন। একের পর এক আবেদন গ্রহণ করে চলেছেন তাঁরা। সরকারি নির্দেশে চাকরি বাঁচাতে ঘাড় গুঁজে কাজ করলেও বেশীরভাগ কর্মীই তুমুল অশান্তিতে। বিলাসমণি দাস, সুব্রত, শুক্লা বৈদ্যদের চোখ-মুখে উৎকন্ঠা স্পষ্ট। কারণ, এনআরসি তালিকায় এখনও নাম ওঠেনি তাঁদেরই। তাই নিজেদের নাম না উঠলেও উৎকণ্ঠা চেপেই অন্যদের আবেদন জমা নেওয়ার কাজ করে চলেছেন তাঁরা। কেন্দ্রের নির্দেশ বলে কথা!
পাশাপাশি চলছে অন্যান্য রাজ্য সরকারের কাঁধে দোষ চাপানোর কাজ। যেমন রত্নদীপ চক্রবর্তী। রত্নদীপের জন্মকম্ম শিলচরেই। তাঁর স্ত্রী ত্রিপুরার ধর্মনগরের। মুক্তা মৈত্র। তাঁর নামও রয়েছে। কিন্তু নাম নেই তাঁদের একমাত্র সন্তান আদিত্য চক্রবর্তীর। ২৯ ডিসেম্বর ২০১৪ সালে সে দিল্লিতে জন্মায়। দিল্লি পুর নিগমের শংসাপত্রে কাজ হয়নি। যাচাই করে জবাব আসেনি। তাই এনআরসি-র দুয়ারে দুয়ারে ঘুরতে হচ্ছে রত্নদীপকে। এমন রত্নদীপের অভাব নেই আসামে। শিলচরের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী বিধান দাশগুপ্ত। তাঁর মা ও স্ত্রীর নাম এনআরসি তালিকাভুক্ত। দুই ছেলে। ছোট ছেলের ২০১৬-য় জন্ম। এনআরসি–র প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু বড় ছেলের হয়ে আবেদন করে নাম তুলতে পারেননি। ওঠেনি তাঁর নামও। সুপ্রিম কোর্ট ১৫টি নথিকেই প্রামাণ্য হিসাবে স্বীকৃতি দিলেও, সমস্যা বেড়েই চলছে। নতুন ফরমান ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৫ সালের আগে বংশবৃক্ষের সঙ্গে আবেদনকারীর সম্পর্কের প্রমাণ দিতে হবে। অর্থাৎ নতুন করে কারও প্যান বা অ্যাডমিট কার্ডে ভারতীয় নাগরিক হলে সেটি গ্রাহ্য হবে না। এই দুর্ভোগের জন্য দায়ী করা হচ্ছে এনআরসি–র রাজ্য সমন্বয়ক প্রতীক হাজেলাকে। আসাম রাজ্য নাগরিক সুরক্ষা সমন্বয় সমিতির চেয়ারম্যান তপোধীর ভট্টাচার্যের কথায়, ‘প্রতীক হাজেলাকে শিখণ্ডী করে এই সব অসাংবিধানিক কাজকর্ম করছে বিজেপি সরকার।’
এক এনআরসি আধিকারিকের প্রশ্ন, রাজ্যগুলি থেকে নথি ভেরিফিকেশন হয়ে আসতে সময় লাগাটা স্বাভাবিক। কিন্তু রাজ্যের মধ্যেও এক টেবিল থেকে অন্য টেবিলে ফাইল পৌঁছতে অনন্তকাল সময় লাগছে কেন?