বিধানসভা ভোটে ভরাডুবির পর থেকেই গেরুয়া শিবিরের মধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে দোষারোপের পালা। বারবারই সামনে এসে পড়ছে এক নেতার সঙ্গে অন্য নেতার কলহের কথা। আর তার পাশাপাশি প্রকাশ্যে চলে আসছে দলের কর্মী-সমর্থকদের ক্ষোভও। এবার যেমন রাজ্য বিজেপির সদর দফতর মুরলিধরন সেন লেনের বাইরে কৈলাস বিজয়বর্গীর বিরুদ্ধে পড়ল পোস্টার। তাতে তাঁকে ‘টিএমসি সেটিং মাস্টার’ বলে কটাক্ষ করা হয়েছে। এক, দুটি নয় – রাজ্য বিজেপির সদর দফতরের বাইরে এই পোস্টারে ছয়লাপ। একইরকম পোস্টার দেখা গেল হেস্টিংসের কার্যালয়ে এবং বিমানবন্দরের কাছেও। দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকের বিরুদ্ধে ক্ষোভমিশ্রিত এসব পোস্টার থেকে স্পষ্ট, একুশের ভোটে বঙ্গে বিজেপির ভরাডুবির পর থেকে কৈলাস দলের অন্দরেই আরও চক্ষুশূল হয়ে উঠছেন।
প্রসঙ্গত, বিজেপিতে থাকাকালীন মুকুল রায়ের সঙ্গে কৈলাস বিজয়বর্গীর ‘সুসম্পর্ক’ গেরুয়া শিবিরের চেনা ছবি ছিল। কিন্তু সম্প্রতি মুকুল রায় দলবদল করে তৃণমূলে ফেরার পর থেকে তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এ নিয়ে তো বিজেপির রাজ্য নেতা তথাগত রায় টুইটেই কৈলাসকে ‘ভোদা বিড়াল’ বলে কটাক্ষ করেছেন। টুইটে আরও লেখা, ‘মমতা পিসি এই ভোদা বিড়ালটাকে তৃণমূলে নিয়ে নাও, মালটা বন্ধুকে না পেয়ে হতাশ হতে পারে। সারাদিন মুকুলের সাথে ফিস/ফিস গুজ/গুজ করত।’ আসলে মুকুল-কৈলাসের ছবি পোস্ট করে এই টুইটটি করেছিলেন বিজেপি কর্মী দিবাকর দেবনাথ। তা রিটুইট করেছেন তথাগত রায়। লিখেছেন, ‘দলের প্রতি বিশ্বস্ত এক বিজেপি কর্মীর টুইটটিকে ইংরেজিতে অনুবাদ করছি। এতে আমি কিছু যোগও করব না, আর কিছু বাদও দেব না।’
এবার মুকুলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা নিয়ে কৈলাসকে বিঁধতে ছাড়লেন না অন্যরাও। হেস্টিংস বা মুরলিধন সেন লেনের বাইরে যেসব পোস্টার পড়েছে তাতে দেখা গেল, মুকুল-কৈলাসের আলিঙ্গনরত একটি ছবি। তার নিচে লেখা – ‘টিএমসি সেটিং মাস্টার’। অর্থাৎ বঙ্গে আশানুরূপ ফলাফল না হওয়ার জন্য রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব কার্যত কেন্দ্রীয় নেতাদেরই দায়ী করছেন। নিশানায় অন্যতম কৈলাস বিজয়বর্গী। এ নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মত, তিনি বেশ কয়েক বছর ধরেই তিনি এ রাজ্যের পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজ করছেন। বাংলায় সংগঠনের প্রতিটি খুঁটিনাটি জেনে সেইমতো ব্লু-প্রিন্ট ছকে তবেই ভোটযুদ্ধে এগোনো উচিৎ তাঁর। কিন্তু ভোটের ফলাফল বলছে, সেই কাজে তিনি ব্যর্থ। তাই তাঁর অপসারণের দাবিও উঠেছে। এবার পোস্টারে সেই ক্ষোভেরই বহিপ্রকাশ ঘটল। কৈলাসকে নিয়ে দলের অন্দরে যে ক্ষোভ চড়ছে, এই পোস্টার তার প্রমাণ, বলছেন বিশ্লেষকরা।