আগামী শুক্রবারই শেষ হচ্ছে ‘দুয়ারে ত্রাণ’ আবেদন জমা নেওয়ার ক্যাম্প। বুধবার পর্যন্ত পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় এই ক্যাম্পে মোট ৮৮হাজার ৯৪টি আবেদন জমা পড়ল। ৩০শে জুনের মধ্যেই সমস্ত আবেদন খতিয়ে দেখার কাজ শেষ করতে হবে। নবান্ন থেকে এমনই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে পূর্ব মেদিনীপুরের প্রত্যেকটি ব্লকে এনকোয়ারি টিম গঠন করা হয়েছে। সেই টিম ইতিমধ্যে আবেদনকারীর বাড়ি বাড়ি গিয়ে আবেদনপত্র খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করে দিয়েছে। এখনও পর্যন্ত ৩২৫৭টি আবেদন খতিয়ে দেখার কাজ শেষ। গোটা প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ এবং দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য জিআইএস ট্যাগিং এবং ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি, পানবরজ প্রভৃতির ছবি তুলে ‘দুয়ারে ত্রাণ’ মোবাইল অ্যাপে আপলোড করতে হবে।
এপ্রসঙ্গে জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, বেশিরভাগ জায়গায় ক্যাম্প শেষ হয়ে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত নন্দীগ্রাম-১ ব্লকে সবচেয়ে বেশি আবেদন জমা পড়েছে। ১২হাজার ২৮৬টি। খেজুরি-২ ব্লকে ১২হাজার ১১২, দেশপ্রাণ ব্লকে ৭২৯২টি, রামনগর-২ব্লকে ৬০৬০টি, কাঁথি-১ব্লকে ৫৫৮৪টি এবং রাগনগর-১ব্লকে ৫৩১৯টি আবেদন জমা পড়েছে। এছাড়াও চণ্ডীপুর ব্লকে ৪৮৭২টি, মহিষাদল ব্লকে ৪৯৮৭টি আবেদন এসেছে। জেলার ২৫টি ব্লকেই ড্রপবক্স ছিল। সেখানেও আবেদন জমা করার সুযোগ দেওয়া হয়। ড্রপবক্সে এবং দুয়ারে ত্রাণ ক্যাম্পে জমা আবেদনপত্র নিয়ে বাড়ি বাড়ি ভিজিট করবেন ব্লক ও পুরসভা স্তরের এনকোয়ারি টিম। এই কাজে মহকুমা এবং ব্লক প্রশাসন এবং সমস্ত সরকারি অফিসের কর্মীদের নিযুক্ত করা হয়েছে। নন্দীগ্রাম, কাঁথি, রামনগর প্রভৃতি এলাকায় আবেদনের সংখ্যা বেশি হওয়ায় ২০থেকে ২৫টি পর্যন্ত এনকোয়ারি টিম তৈরি করা হয়েছে।
প্রত্যেক এনকোয়ারি টিমকে ‘দুয়ারে ত্রাণ’ মোবাইল অ্যাপ ইনস্টল করতে বলা হয়েছে। বাড়ি বাড়ি ভিজিট করার সময় ভেঙে পড়া বাড়ির ছবি তুলতে হবে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হলে সম্পূর্ণ বাড়ির ছবি তুলতে হবে। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হলে বাড়ির ভগ্নাবশেষের ছবি তুলতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত পানবরজের ক্ষেত্রেও ছবি তুলতে হবে। সেক্ষেত্রে সাইক্লোনের পর পানবরজ কী অবস্থায় রয়েছে, সেই ছবি তুলতে হবে। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরাই যাতে ক্ষতিপূরণ পান সেটা নিশ্চিত করতে চাইছে রাজ্য। সেজন্য জিআইএস ট্যাগিং এবং ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি ও পানবরজের ছবি রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, আগামী ১ থেকে ৭ই জুলাই ক্ষতিগ্রস্তদের অ্যাকাউন্টে ক্ষতিপূরণ দেবে সরকার। তার আগে এনকোয়ারির কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে। এক সপ্তাহের মধ্যে প্রায় এক লক্ষ আবেদন খতিয়ে দেখে বাড়ি বাড়ি গিয়ে এনকোয়ারি করা বেশ কঠিন কাজ। সেজন্য আগেভাগে ওই কাজে নেমে পড়েছে জেলা প্রশাসন। কাঁথি-১ ব্লকে সবচেয়ে বেশি (৭৯৮টি) আবেদনের এনকোয়ারি শেষ হয়েছে। তাছাড়াও খেজুরি-২ ব্লকে ৪৬৯টি, রামনগর-১ ব্লকে ৩৮৪টি, এগরা-২ ব্লকে ৩৪৫টি আবেদনের এনকোয়ারি শেষ।
পাশাপাশি, সাইক্লোনে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি মৌজার চাষিরা ক্ষতিপূরণ পাবেন। জেলায় ৩৮৩টি মৌজাকে কৃষিক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত বলে গেজেট নোটিফিকেশন করেছেন জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজী। ওই ৩৮৩টি মৌজার চাষীরা আবেদন না করলেও কৃষিতে ক্ষতিপূরণ বাবদ এক হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা পাবেন। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির জন্য ২০হাজার টাকা এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির জন্য পাঁচ হাজার টাকা দেবে রাজ্য। মৎস্যজীবীরা হাঁড়ি, মাছ ধরার জাল এবং নৌকার ক্ষয়ক্ষতি বাবদ টাকা পাবেন। এবিষয়ে অতিরিক্ত জেলাশাসক।(দুর্যোগ ব্যবস্থাপন) সুদীপ্ত পোড়েল বলেন, ৩রা জুন থেকে দুয়ারে ক্যাম্প শুরু হয়েছিল। আগামী ১৮ তারিখ আবেদন নেওয়া শেষ হচ্ছে। আমাদের জেলায় এক লাখের কাছাকাছি আবেদন জমা পড়েছে। ইতিমধ্যেই ব্লকস্তরে এনকোয়ারি শুরু হয়েছে। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা যাতে ক্ষতিপূরণ পান, তাও নিশ্চিত করবে সরকার।