বাংলায় একুশের যুদ্ধে বিজেপিকে রুখে দেওয়ার পরই সর্বভারতীয় রাজনীতিতে তাঁর সম্ভাব্য গতিবিধি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। যার ফলস্বরূপ দিন কয়েক আগেই টুইটারে দেখা গিয়েছিল নতুন ট্রেন্ডিং — হ্যাশট্যাগ ইন্ডিয়া ওয়ান্টস মমতাদি! অর্থাৎ ভারত মমতাদিকেই চায়। অন্যদিকে, তৃণমূলেরও লক্ষ্য এখন দিল্লী বিজয়ই। আর সেই সূত্রেই ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটকে কেন্দ্র করে একাধিক রাজ্যে শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য এগোচ্ছে তারা। ইতিমধ্যেই দলে ফিরে এসেছেন মুকুল রায়। ফলে মুকুলকে কাজে লাগিয়েই এবার ভিনরাজ্যে সংগঠন বিস্তারে মন দিতে চাইছে তৃণমূল। আর সেই লক্ষ্যে প্রথম টার্গেটই হল ত্রিপুরা। বর্তমানে বিজেপি শাসিত এই রাজ্যে তৃণমূল অনেক আগেই প্রবেশ করেছিল। আর সেই কাজটি করেছিলেন মুকুল রায়ই। তাঁর হাতযশেই ত্রিপুরাতে তৃণমূলের ৬ জন বিধায়ক ছিল। কিন্তু মুকুল রায় বিজেপিতে যোগদান করার পরেই সমস্ত বিধায়ক বিজেপিতে চলে যান। তারপর থেকেই ত্রিপুরা কার্যত তৃণমূলশূন্য। কিন্তু এবার ফের ‘খেলা’ শুরু হতে চলেছে ত্রিপুরায়। সৌজন্যে সেই মুকুল।
প্রসঙ্গত, আগামী লোকসভা নির্বাচনের জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল। তাই সবার আগে লক্ষ্য হল, অন্যান্য রাজ্যে নিজেদের ক্ষমতা বিস্তার করা। সেই লক্ষ্যেই বাঙালি অধ্যুষিত রাজ্য আসাম এবং ত্রিপুরার দিকে টার্গেট করেছে ঘাসফুল ব্রিগেড। ইতিমধ্যেই ত্রিপুরায় তৃণমূলের তরফ থেকে নিয়ে আসা হয়েছে একটি নতুন গান। গানের নামই হল, ‘ত্রিপুরা কইতাসে, মমতাদি আইতাসে।’ গানটি ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলেছে। অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে গেছে সেই গান। ত্রিপুরার বহু মানুষ এই গানটি নিজেদের প্রোফাইলে শেয়ারও করছেন। গানের নামেই স্পষ্ট, ত্রিপুরায় তৃণমূলের মুখ সেই মমতাই। এই গানে মূলত তৃণমূলের এ রাজ্যে বিভিন্ন জনদরদি প্রকল্পের বিষয়গুলি তুলে ধরা হয়েছে। খাদ্যসাথী থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যসাথী, কন্যাশ্রী থেকে শুরু করে যুবশ্রী, বাংলার সফল প্রকল্পগুলির কথাই তুলে ধরা হয়েছে গানটিতে।
দিল্লী দখল করতে শুধু যে বাংলার ভরসায় থাকা যাবে না, তা বিলক্ষণ জানেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পদে নিযুক্ত হওয়ার পরেই মুকুল রায়কে সঙ্গী করে ভিনরাজ্যের জন্য কাজ শুরু করে দিয়েছেন অভিষেক। ইতিমধ্যেই শোনা যাচ্ছে, বিজেপি ছাড়তে পারেন মুকুল ঘনিষ্ঠ সুদীপ রায় বর্মন। শুধু সুদীপ নয়, তাঁর ঘনিষ্ঠ বিজেপি বিধায়করাও দল ছাড়তে পারেন বলে জল্পনা। উল্লেখ্য, সুদীপ বাবুর সঙ্গে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের সংঘাত সুবিদিত। অথচ সুদীপ বাবুর কাঁধে ভর দিয়েই ত্রিপুরা জয় সহজ হয়েছিল বিজেপি–র। কিন্তু সেই সুদীপকেই মুখ্যমন্ত্রী করা হয়নি। তাঁর বদলে মুখ্যমন্ত্রী হন বিপ্লব দেব। এর পর তিনি ক্রমেই কোণঠাসা করতে থাকেন সুদীপকে। মন্ত্রিত্বও হারান সুদীপ। তাই বিজেপি–তেও থেকে তিনি আর নেই। সূত্রের খবর, সরকারিভাবে তাঁর বিজেপি ছাড়া সময়ের অপেক্ষা। তারপরই পুরোদমে ‘খেলা’ শুরু হবে ত্রিপুরায়।