গত শুক্রবারই দলত্যাগ করে সপুত্র তৃণমূলে ফিরেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায়। ওইদিন তৃণমূল ভবনে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়দের উপস্থিতিতে ‘ঘর ওয়াপসি’ হয় তাঁর। পর থেকেই শোনা যাচ্ছিল যে, এবার কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক পদ ছেড়ে দেবেন মুকুল। তবে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর শীর্ষনেতৃত্বের নির্দেশে সেই সিদ্ধান্ত বদলেছেন তিনি। যতক্ষণ না শীর্ষনেতৃত্ব নির্দেশ দিচ্ছেন, ততক্ষণ মুকুল বিধায়কই থাকছেন। তার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, নতুন বিধানসভার যে সব কমিটি গঠিত হবে, তার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পিএসি (পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি)-র চেয়ারম্যান করা হতে পারে মুকুলকে। বিধানসভার রীতি অনুযায়ী তা একেবারে অসম্ভব নয় বলেও অভিমত অভিজ্ঞ এবং প্রবীণ বিধায়কদের।
তবে তৃণমূল সূত্রের খবর, দলীয় স্তরে মুকুলকে পিএসি চেয়ারম্যান হিসেবে এগিয়ে দেওয়ার ভাবনাচিন্তা শুরু হলেও এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। পুরো বিষয়টিই আপাতত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিবেচনাধীন। তিনি সবুজ সঙ্কেত দিলে তবেই বিষয়টি নিয়ে আরও গুরুত্ব দিয়ে এগোন হবে। তার আগে এ-ও দেখে নেওয়া হবে যে, বিজেপি মুকুল নিয়ে কতদূর যাচ্ছে। কারণ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সোমবারেই জানিয়েছেন, তাঁরা বুধবারেই স্পিকারের কাছে মুকুলের বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকর করার দাবি করবেন। যদিও দলত্যাগ বিরোধী আইন অনুযায়ী কোনও বিধায়ক বা সাংসদের সদস্যপদ খারিজ করার বিষয়ে চূড়ান্ত ক্ষমতা দেওয়া রয়েছে সংশ্লিষ্ট আইনসভার স্পিকারকে। কবে, কার বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকরের পদক্ষেপ করবেন বা আদৌ করবেন কি না, সবেরই শেষ কথা তিনি।
তাই মুকুলকে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ইস্তফা দিতে বলছে না তৃণমূল। স্পিকার পদক্ষেপ না করলে খাতায় কলমে বিজেপির বিধায়ক থেকেও তিনি সভার বাইরে তৃণমূল থাকতে পারবেন। এমন উদাহরণ রাজ্যে এবং দেশে ভূরি ভূরি রয়েছে। দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকর করার মতো পিএসির চেয়ারম্যান মনোনীত করার অধিকারও স্পিকারের হাতেই। সাধারণত ওই কমিটির প্রধান হয়ে থাকেন বিরোধী দলের মনোনীত বিধায়ক। কিন্তু সেটি কোনও আইনসিদ্ধ বিষয় নয়। বিরোধী দল থেকেই পিএসির চেয়ারম্যান করতে হবে, এমন কোনও বিধি নেই বিধানসভার আইনে। শাসকদলের বিধায়কেরই ওই কমিটির চেয়ারম্যান থাকার নজিরও দেশে রয়েছে। উল্লেখ্য, রাজ্য বিধানসভায় মোট ৪১টি কমিটি রয়েছে। যার মধ্যে ২৬টি স্ট্যান্ডিং কমিটি এবং ১৫টি অ্যাসেম্বলি কমিটি। একটা সময় পর্যন্ত খবর ছিল, শাসক তৃণমূলের পরিষদীয় দল পিএসি-সহ ১০টি কমিটির শীর্ষপদ বিজেপিকে ছাড়তে পারে। কিন্তু বিধানসভার একটি সূত্রের দাবি, তৃণমূল ওই কমিটির চেয়ারম্যান পদে মুকুলকে বসানো নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে।