বৈরিতা ভুলে ফের ঘাসফুলে ফিরে এলেন মুকুল রায়। তৃণমূলও অতীতের সব তিক্ততা ভুলে ‘ঘরের ছেলে’কে ফিরিয়ে নিল। ২০১৭ সালের অক্টোবরে গেরুয়া শিবিরে নাম লেখান একদা তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড। ২০২১ সালের জুনে আবার প্রত্যাবর্তন। এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে, মুকুলকে ছাড়াই তো একুশের লড়াইয়ে দুর্দান্ত ফল করল শাসকদল। তাহলে তথাকথিত ‘গদ্দার’কে ফেরানো কেন? আসলে, এর পিছনে রয়েছে ঘাসফুল শিবিরের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।
তৃণমূল থেকে বিজেপিতে ওজনদার নেতাদের যাওয়া শুরু হয়েছিল মুকুল রায়কে দিয়েই। তারপর একে একে অর্জুন সিং থেকে শুরু করে শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়রা গিয়েছেন গেরুয়া শিবিরে। আসলে মুকুলের বিজেপি যোগের পর বঙ্গ রাজনীতিতে একটা আবহ তৈরি হয়েছিল, যে তৃণমূলের ভাঙন আসন্ন। আর এবার একুশের ভোটের পর পাল্টা এই খেলাটাই খেলতে চাইছে তৃণমূল। রাজ্যের শাসকদল এবার বার্তা দিতে চাইছে, বিজেপি ভাঙনের মুখে এবং মুকুলের হাত ধরে একে একে নেতারা গেরুয়া শিবির ছেড়ে ঘাসফুলে নাম লেখাবেন। আর এই সবটাই চব্বিশের লোকসভার কথা মাথায় রেখে।
মুকুল রায় যে দক্ষ সংগঠক, একথা তাঁর অতি বড় শত্রুও স্বীকার করেন। অনেকে তাঁকে রাজ্য রাজনীতির ‘চাণক্য’ও বলেন। উনিশের লোকসভায় বিজেপির প্রশ্নাতীত সাফল্য এবং তৃণমূলের ধাক্কা খাওয়ার নেপথ্যের আসল কারিগরই ছিলেন তিনিই। মূলত, মুকুলের ভোট মেশিনারিতে ভর করেই গেরুয়া শিবির রাজ্য থেকে ১৮ জনকে সংসদে পাঠাতে পেরেছিল। তাই এবার তৃণমূল চাইছে বিজেপির থেকে সেই ভোট মেশিনারি ছিনিয়ে নিতে। ঘাসফুলের নিজস্ব সংগঠনের সঙ্গে মুকুলের মেশিনারি যোগ হলে, তৃণমূল যে অনেক বেশি শক্তিশালী হবে তাতে সন্দেহ নেই। মুকুলকে স্বাগত জানিয়ে মমতাও তেমনটাই দাবি করলেন। তৃণমূলনেত্রী বললেন, “আমাদের দল আগেই শক্তিশালী ছিল। আমরা নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছি। তবে, আমি মনে করি মুকুল এখানে এল, ও একটু শান্তি পাবে।” মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, তৃণমূলে আগের মতোই কাজ করবেন মুকুল।
বিধানসভা নির্বাচনে জিতে এবার তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান লক্ষ্য, ২৪-এ দিল্লী জয়। সেইজন্য নিজের সংগঠনকেও ঢেলে সাজিয়েছেন মমতা। আর এবার মুকুলকেও নিজের দলে ফিরিয়ে আনলেন। কারণ, সর্বভারতীয় রাজনীতিতে মুকুলের থেকে বেশি অভিজ্ঞ তৃণমূলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া আর কেউ নেই। স্বাভাবিকভাবেই চব্বিশের লড়াইয়ে মুকুলের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চাইবে রাজ্যের শাসকদল। একুশের লড়াইয়ে বড় জয় মানেই চব্বিশের লড়াইয়ে তৃণমূল ওয়াক-ওভার পেয়ে যাবে, এই ধারণা ঠিক নাও হতে পারে। কারণ, চব্বিশের লোকসভার লড়াইটা হবে নরেন্দ্র মোদীকে সামনে রেখে। রণকৌশল তৈরির দায়িত্ব পুরোপুরি থাকবে অমিত শাহর কাছে। তাই এর পাল্টা হিসাবে মুকুল রায়-ই হতে পারে মমতার আসল অস্ত্র।