তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর ‘নীতিগতপ্রশ্নে’ সদ্য-জেতা বিজেপি-র বিধায়কপদ ছেড়ে দিতে পারেন মুকুল। তেমনই দাবি তাঁর ঘনিষ্ঠমহলের। বস্তুত, ৭৫ জন বিজেপি বিধায়কের মধ্যে মুকুল একা দল ছাড়লে স্বভাবতই তাঁর বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইন প্রযুক্ত হবে। সে ঝুঁকি মুকুলই বা কেন নিতে যাবেন, তৃণমূলই বা কেন ওই ‘অনৈতিক’ অবস্থানের দায় নিতে যাবে? বিধায়কপদ ছাড়লে কি মুকুল একেবারেই সংসদীয় রাজনীতি থেকে দূরে থাকবেন? মুকুলের ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, তেমন না-ও হতে পারে। মুকুলকে রাজ্যসভার সাংসদ করতে পারেন মমতা।
মুকুল আগে একবার বিধানসভা ভোটে লড়লেও এই প্রথম তিনি জিতলেন। তা-ও নিজের যথেষ্ট অনীহা সত্ত্বেই। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নির্দেশে তিনি ভোটে লড়তে রাজি হন। কিন্তু ভোটের প্রচারপর্বে এবং তার পরেও তাঁকে যথেষ্ট নিস্পৃহই দেখিয়েছে। ঘটনাচক্রে, ভোটে বিজেপি-র বিপর্যয়ের পর থেকেই মুকুল-বিজেপি দূরত্ব বাড়তে শুরু করে। সেই দূরত্বই শুক্রবার পাকাপাকি ভাবে রচিত হয়ে গেল। বস্তুত, দূরত্ব নয়, মুকুল বিচ্ছিন্নই হয়ে গেলেন বিজেপি-র থেকে। ২০১৭ সালে পদ্মশিবিরে যে যাত্রা মুকুলের শুরু হয়েছিল, তার অবসান ঘটল ২০২১ সালে এসে। মাঝখানের সময়টা মুকুল যে খুব স্বচ্ছন্দ ছিলেন গেরুয়াশিবিরে, তা তাঁর অতি বড় হিতৈষীও বলতে পারবেন না। লোকসভা ভোটে সাংগঠনিক সাফল্যের পরেও তাঁকে বিজেপি-র অন্দরে সে ভাবে ‘মর্যাদা’ দেওয়া হয়নি। মুকুলের ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, ২০২০ সালের মাঝামাঝি মুকুল বিজেপি ছাড়ার বিষয়ে মনস্থির করে ফেলেছিলেন। কিন্তু শেষমুহূর্তে তিনি মতবদল করেন। তবে তার পর থেকে তিনি মমতা বা তৃণমূল সম্পর্কে একটিও কটূবাক্য উচ্চারণ করেননি। সেই সময় থেকেই মুকুল-তৃণমূল সমীকরণ বদলাতে শুরু করে।
শুক্রবার মুকুলের সঙ্গেই তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কথা তাঁর পুত্র তথা বীজপুরের প্রাক্তন বিধায়ক শুভ্রাংশু রায়ও। যোগ দেওয়ার কথা মুকুল-ঘনিষ্ঠ ছাত্রনেতা সুজিত শ্যামও। মুকুলের পর তাঁর ঘনিষ্ঠ সব্যসাচী দত্তও তৃণমূলে যেতে পারেন বলে জল্পনা তৈরি হয়েছে। যা খুব একটা উড়িয়েও দিচ্ছেন না তৃণমূলের লোকজন। গত কয়েকদিন ধরেই অনুগামীদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছিলেন মুকুল। যেখানে তিনি বলেছিলেন, আর তিনি বিজেপি-তে থাকতে চান না। তাঁর ঘনিষ্ঠদের উদ্ধৃত করতে গেলে মুকুল বলেছিলেন, ‘‘এই দলটা (বিজেপি) আর করা যাবে না!’’ সূত্রের খবর, মুকুলকে রাজ্যসভায় পাঠাতে পারেন মমতা। ঘটনাচক্রে, রাজ্যসভায় তৃণমূলের দু’টি আসন এখন খালি রয়েছে। প্রথমটি দীনেশ ত্রিবেদীর। দ্বিতীয়টি মানস ভুঁইয়ার। ওই দুই আসনের যে কোনও একটিতে মমতা চাইলে মুকুলকে পাঠাতে পারেন।